টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনা সহ্য করা হবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা ভেঙেছে তাদেরও ঘরবাড়ি ও কবর আছে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের মাকড়াই দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশে গতকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) এক আবেগঘন ও কড়া ভাষণে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যারা ভেঙেছে, মনে রাখবেন তাদেরও ঘরবাড়ি আছে। তাদেরও কবর আছে, তাদেরও স্মৃতিসৌধ আছে। কিন্তু সেই কবর তারা হাতে নিয়ে ঘুরতে পারবে না, ঘরবাড়ি হাতে নিয়ে যেতে পারবে না। তাই সীমা অতিক্রম করবেন না।
তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, জাতির জনকের বাড়ি ভাঙা কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং জাতীয় অনুভূতিতে আঘাত। এ ঘটনার মাধ্যমে যারা এ কাজ করেছে, তারা দেশের মানুষকে অপমানিত করেছে এবং ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আপনাকে আমি সবসময় শ্রদ্ধা করেছি। আপনাকে অনেক বড় মানুষ ভেবেছি। কিন্তু আপনার এক বছরের শাসনে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুর হলো, আর আপনি সেটি দেখে গেলেন। এটি মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরও যোগ করেন, “ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন দিতে না পারেন, তবে আপনার পরিণতি শেখ হাসিনার চেয়ে ১০ গুণ ভয়াবহ হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ করেও কাদের সিদ্দিকী কঠোর ভাষায় সতর্ক করেন। তিনি বলেন, “ভেবেচিন্তে কথা বলুন। কেউ যদি বলে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা নন, তবে সে নিজেই কুলাঙ্গার। কোনো সন্তানের পিতা না থাকলে সে সম্মানি সন্তান হয় না, বরং কুলাঙ্গার হয়।”
তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার পতন জনগণের আন্দোলনের কারণে হয়েছে, এটি আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে। কিন্তু কোনো গোষ্ঠী যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে প্রতিশোধ নিতে চায়, তবে তিনি তা কখনো মেনে নেবেন না। “শেখ হাসিনার বিচার করুন, শাস্তি দিন—আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু অন্যায় করলে আমি জীবিত থাকতে তা হতে দেব না।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর শেখ হাসিনাকে এক করে দেখবেন না। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ, শেখ হাসিনাকে এক করে দেখবেন না। বঙ্গবন্ধু যতদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁর সংগ্রাম ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। শেখ হাসিনার ভূমিকা ভিন্ন জায়গায়।
তিনি আরও দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধু চিরকাল বেঁচে থাকবেন। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন জয় বাংলা ধ্বনি থাকবে, তত দিন বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হিসেবেই থাকবেন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর এই বক্তব্য শুধু উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদেরই না, সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন—জাতির জনকের মর্যাদা নিয়ে খেলা করলে তার জবাব মিলবেই।