১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমন্ডির বাসভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও জাতি আজও শোকাহত।
আজ ১৫ আগস্ট—বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিনগুলোর একটি। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে, ভোররাতের অন্ধকারে সেনাবাহিনীর একটি বিদ্রোহী দল ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ঢুকে তাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
সেই ভয়াল ভোরে কেবল বঙ্গবন্ধুই প্রাণ হারাননি। একে একে প্রাণ হারান তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, মধ্যম পুত্র শেখ জামাল ও কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল। নিহত হন কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ও জামালের স্ত্রী রোজী জামাল।
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরও হত্যাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাননি। নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত ও সুকান্তবাবু, কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত। একইসঙ্গে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি। সেদিন নিহত হন আবদুল নাঈম খান রিন্টু এবং কর্নেল জামিলসহ মোট ১৬ জন পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন।
সৌভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। কিন্তু সেই দিনের ভয়াবহতা শুধু পরিবারকেই ছিন্নভিন্ন করেনি, বরং পুরো জাতির ইতিহাসে এক গভীর ক্ষতের জন্ম দিয়েছে, যা আজও সমান বেদনাদায়ক।
এই হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনের মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে দীর্ঘ ২১ বছর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচার প্রক্রিয়ার দ্বার উন্মুক্ত করে।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালে পাঁচজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে এখনও পলাতক কিছু আসামির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলমান। এই বিচার নিয়ে বছরের পর বছর নানা বিতর্ক থাকলেও, জাতির কাছে এটি ছিল ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
আজ অর্ধশতাব্দী পরও ১৫ আগস্ট এলে গোটা জাতি শোকাবহ স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি নানা আয়োজনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্ট শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়—এটি একটি জাতির স্বপ্নভঙ্গের দিন, একটি রাষ্ট্রের জন্মদাতাকে হারানোর শোকের দিন। আজ বঙ্গবন্ধুর ৫০তম শাহাদতবার্ষিকীতে জাতি আবারও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছে তার আদর্শ ও স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য।