বাংলাদেশের তরুণদেরকে বিশ্বমানের শিল্প-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জনে প্রস্তুত করার জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) খাতকে উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের টিভিইটি খাতকে বৈশ্বিক মানসম্পন্ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অগ্রগামী কর্মশক্তি উন্নয়ন ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করতে হবে।' রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে টিভিইটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ২০২৫-২০৩০ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ বর্তমানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের জন্য পরিচিত। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্পখাতও দ্রুত অটোমেশন, স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সেবা খাতের জন্য টিভিইটি স্নাতকদের চাহিদা বৃদ্ধির মুখে রয়েছে।
ড. আবরার বলেন, 'জরুরি ভিত্তিতে এই চাহিদা পূরণে আমাদের তরুণদেরকে বিশ্বমানের শিল্প-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জনে প্রস্তুত করতে হবে।' তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০২৫-২০৩০ সালের টিভিইটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা দেশের জন্য একটি মাইলফলক হবে। এটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও শিল্পের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার, নারী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, সবুজ ও ডিজিটাল দক্ষতা অন্তর্ভুক্তকরণ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্য চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মতো অগ্রাধিকার অন্তর্ভুক্ত করবে। শিক্ষা উপদেষ্টা শিল্প মালিক, নিয়োগকর্তা ও সেক্টর স্কিল কাউন্সিলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'কারিগরি শিক্ষাকে মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থানে রূপ দিতে তাদের অভিজ্ঞতা এবং অবকাঠামো অপরিহার্য।' তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা দ্রুত বহুপক্ষীয় জাতীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, পরিকল্পনার স্থানীয় বাস্তবায়ন, চলতি অর্থবছরের কার্যক্রম পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ এবং শক্তিশালী জবাবদিহি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। এছাড়াও, পরিকল্পনাটিকে জাতীয় দলিল হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, 'এই পরিকল্পনার সময়সীমা ৫ বছর, এবং এর সফল বাস্তবায়ন লক্ষ লক্ষ তরুণের জীবন পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে।' অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান এডউইন কুককুক। আরও বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) সামসুর রহমান খান। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদেরকে বিশ্বমানের শিল্প-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জনে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হলো, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।