প্যারিসে শুরু হয়েছে ‘রেইজ সামিট ২০২৫’—বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্মেলন। অথচ বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি নেই। এ অনুপস্থিতি কি প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতের দৌড়ে আমাদের পিছিয়ে পড়ার সংকেত?
প্যারিসে আজ থেকে শুরু হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক বিশ্বসেরা সম্মেলন ‘রেইজ সামিট ২০২৫’। ইতিহাসখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরের নিচতলায় অবস্থিত ক্যারুসেল দু ল্যুভর-এ আয়োজিত এই দুইদিনব্যাপী সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, গবেষক, উদ্ভাবক, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকেরা।
প্রায় পাঁচ হাজার অংশগ্রহণকারী নিয়ে আয়োজিত এই সম্মেলনে থাকছেন ২৫০ জন বক্তা ও দেড় হাজারেরও বেশি স্টার্টআপ ও টেক প্রতিষ্ঠান। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো—‘রেস টু সুপারইন্টেলিজেন্স’, অর্থাৎ সুপার বুদ্ধিমত্তার দিকে মানবজাতির দৌড়।
এই প্রতিপাদ্যকে ঘিরে আলোচনা করবেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জগতের দিকপালরা। বক্তাদের মধ্যে আছেন গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী এরিক স্মিথ, হাগিং ফেস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা থমাস উলফ, স্নোফ্লেক-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বনোয়া দাগেভিল, এবং ইউআইপাথ-এর প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল ডাইনস। এ ছাড়া আরও উপস্থিত আছেন ল্যাটিস-এর সিইও সারা ফ্র্যাঙ্কলিনসহ বহু আন্তর্জাতিক মুখ।
সম্মেলনে থাকছে এআই হ্যাকাথন, স্টার্ট-আপ কম্পিটিশন, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার টেকনোলজির প্রদর্শনী, এবং বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণে গোলটেবিল বৈঠক। এসব আয়োজনের উদ্দেশ্য একটাই—বিশ্বকে সুপার ইন্টেলিজেন্স ও এআই-নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা।
গুগলের সাবেক সিইও এরিক স্মিথ বলেন,এআই এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়, এটি বর্তমানের বাস্তবতা। এখনই যদি আমরা নীতিগত প্রস্তুতি না নিই, ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।
ল্যাটিস-এর সিইও সারা ফ্র্যাঙ্কলিন বলেন,এআই শুধু অটোমেশন নয়, এটি ব্যবসা ও সমাজের মৌলিক রূপান্তরের নাম।
এই সম্মেলনের আয়োজনে রয়েছে গুগল ক্লাউড, ইউআইপাথ, প্যালান্টির, ডেটাডগ, সেরিব্রাস, রেড হ্যাট এবং স্নোফ্লেকের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। ফলে সম্মেলনটি কেবল আলোচনার প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর দিকনির্দেশনা নির্ধারণের একটি বিশাল মঞ্চ ।
এতবড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি নেই—না সরকারি, না বেসরকারিভাবে। আয়োজকদের প্রকাশিত বক্তা তালিকায় বাংলাদেশের কারও নাম পাওয়া যায়নি।
যেখানে ভারত, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এমনকি আফ্রিকার কিছু দেশ পর্যন্ত এআই নিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ নেই—এ বিষয়টিকে হতাশাজনক বলে মনে করছেন দেশের প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা।
ব্যক্তিগতভাবে কিছু বাংলাদেশি উদ্যোক্তার উপস্থিতির সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে অংশ না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে—আমরা কি এআই-ভিত্তিক আগামীর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত?
অনেকে বলছেন, এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিতি কেবল ব্র্যান্ডিং নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে প্রযুক্তি খাতে নিজেকে প্রমাণের এবং গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের বড় সুযোগ। সেই সুযোগ থেকে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় আমাদের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্ব যখন এআই-নির্ভর নীতিমালা, বিনিয়োগ ও সুপার ইন্টেলিজেন্স নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা করছে, তখন বাংলাদেশ সেখানে কোনো অংশগ্রহণ ছাড়াই নিঃশব্দ দর্শক হয়ে থাকছে।