ব্রিকস সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির জবাবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা সাফ জানিয়ে দেন, “বিশ্ব আর কোনো সম্রাট চায় না।” ট্রাম্পের ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ অভিযোগকেও প্রত্যাখ্যান করেছে জোটের নেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন, তখন বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর জোট ব্রিকস থেকে এসেছে একদম ভিন্ন বার্তা। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ট্রাম্পের হুমকির কড়া জবাব দেন। তিনি বলেন, বিশ্ব বদলে গেছে। আমরা আর কোনো সম্রাট চাই না।
এর আগে, ট্রাম্প রবিবার রাতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ব্রিকস দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তাদের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হবে। সোমবার তিনি ১৪টি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তার মতে, যারা ব্রিকসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের আধিপত্য হ্রাস করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে, ব্রাজিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এবারের ব্রিকস সম্মেলনে অভিন্ন মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা থেকে সদস্য দেশগুলো পিছিয়ে এসেছে। যদিও লুলা বলেন, মার্কিন ডলারের বিকল্প খোঁজা এখন সময়ের দাবি, এবং তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রথম ঘোষণা দেন, যদি ব্রিকস আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প খুঁজে পায়, তাহলে জোটভুক্ত দেশগুলোকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের মুখে পড়তে হতে পারে। এরপর থেকে ট্রাম্পের প্রশাসন বিভিন্ন দেশকে পৃথকভাবে লক্ষ্যবস্তু করছে।
তবে ব্রিকস সম্মেলনের জবাবে শুধু লুলাই নয়, অন্যান্য সদস্যরাও সতর্ক ভাষায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, শুল্ক কোনো চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক চায়।
রাশিয়ার ক্রেমলিন মুখপাত্র জানান, ব্রিকসের সঙ্গে রাশিয়ার অংশীদারিত্ব একটি অভিন্ন বৈশ্বিক দর্শনের ভিত্তিতে গঠিত এবং এটি কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয়।
ভারতের পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না এলেও ধারণা করা হচ্ছে, দেশটি কৌশলগত কারণে অপেক্ষাকৃত নীরব ভূমিকা নিচ্ছে।
২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন প্রথম ব্রিকস গঠন করে। ২০১০ সালে যুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০২4 সাল নাগাদ নতুনভাবে এতে যুক্ত হয়েছে মিসর, ইরান, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরব এখনো পূর্ণ সদস্য না হলেও অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
৩০টিরও বেশি দেশ ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই সম্প্রসারণই ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিকসের অভিন্ন অর্থনৈতিক কাঠামো এবং মার্কিন ডলারের বিকল্প ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।
লুলা বলেন, বিশ্বকে এমন একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বাণিজ্যিক লেনদেনের সব কিছু ডলারের মাধ্যমে না করতে হয়। এটা অবশ্যই দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিকসের মূল শক্তি হলো এর বহুত্ববাদ ও বিকল্প চিন্তা। আমরা কারো বিরুদ্ধে নই, বরং নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করছি।
ব্রিকস সম্মেলন শেষে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে জোট সদস্যরা ইরানে বোমা হামলার নিন্দা জানান এবং শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে সৃষ্ট ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন।
ব্রিকসের বার্তার কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প আবার বলেন, যারা ব্রিকসে যোগ দিতে চাইছে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে। এমন বক্তব্যে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র এ জোটের প্রভাব বাড়াকে সহজভাবে নিচ্ছে না।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, আপাতত ১০ শতাংশের বেশি বাড়তি শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে।