হৃদয় বড়ুয়া ২০২০ সাল থেকে স্বেচ্ছায় নিজের প্রচেষ্টায় একাই সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করার জন্য চেষ্টা করতেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ‘স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ’-এর সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়ে সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তিনি উদ্ধার করেছেন প্রায় দুই শত বিষধর ও নির্বিষ সাপ এবং ৫০টিরও বেশি বন্যপ্রাণী। তার উদ্ধারকৃত সাপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—লাল গলা ডোরা, ছোট কৃষ্ণ কালাচ, শঙ্খিনী, পদ্ম, হেলে, ঘরগিন্নি, দুধরাজ, ইন্দো-চীন দাঁরাশ ও উদয়কাল। প্রাণীর মধ্যে রয়েছে—লজ্জাবতী বানর, বন মোরগ, ময়না, টিয়া প্রভৃতি।
হৃদয় বড়ুয়া বলেন, “সাপ দেখলেই মানুষ ভয় পায়, মেরে ফেলে। এটা আমার কাছে খারাপ লাগতো। এরা নিরীহ প্রাণী। সৃষ্টিকর্তা সকল প্রাণীকেই পৃথিবীর মঙ্গলের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সকল প্রাণীই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এই ধারণা থেকেই আমি এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি বেছে নিই। আমাদের দেশের কিছু সাপ বিষধর হলেও বেশিরভাগ সাপই নির্বিষ। আমি চাই মানুষ সাপের উপকারিতা জানুক এবং অকারণে না মেরে আমাকে খবর দিলে উদ্ধার করে নিয়ে আসবো।”
হৃদয় জনান, শুরুর দিকে বিষাক্ত সাপ ও বন্যপ্রাণী ধরতে দেখে প্রতিবেশীরা নেতিবাচকভাবে দেখলেও বর্তমানে সবাই তাকে উৎসাহ দেয়। দীঘিনালা ও আশেপাশের এলাকার প্রায় মানুষ এখন সচেতন। সাপ দেখলেই তাকে খবর দেন। উদ্ধারের পর কোনো প্রাণী আহত থাকলে হৃদয় নিজ উদ্যোগে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। তিনি খাগড়াছড়ি বন বিভাগের মেরুং ও নাড়াইছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তাদের সহায়তায় সেগুলো জনবহুল এলাকা থেকে গহীন জঙ্গলে অবমুক্ত করেন।
স্থানীয় ব্যক্তি মনির হোসেন জানান, হৃদয় চার-পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন বিষধর সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করছে। সাপ ও বন্যপ্রাণী না থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। হৃদয় বিপদগ্রস্ত সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা পালন করছে। অন্যান্য তরুণদেরও হৃদয়ের পরিবেশ রক্ষায় বন্যপ্রাণী উদ্ধারে এগিয়ে আসা উচিত।
পরিবেশবিদদের মতে, হৃদয় বড়ুয়া শুধু সাহসিকতা নয়, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এই প্রয়াস স্থানীয়দের মধ্যে ইতোমধ্যেই ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করেছে।
বর্তমানে হৃদয় শিক্ষাজীবন শেষ করে গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তবে সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার তার নেশা, ভালবাসা ও আবেগে পরিণত হয়েছে। তরুণদের পরিবেশ রক্ষায় তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আগামী প্রজন্মের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।