বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হলেন জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন সবসময়ই দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের কাছে বড় ধরনের আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনকে ঘিরে ক্রিকেট মহল, ক্রীড়া সংগঠন এমনকি সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকেন। আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন। তবে নির্বাচনের আগেই নানা নাটকীয়তায় পরিবর্তন এসেছে প্রতিযোগিতার চিত্রে।
আজ বুধবার ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। নিয়ম অনুযায়ী দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনোনয়ন বাতিল করা সম্ভব ছিল। এর মধ্যেই একে একে বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে অন্যতম নাম জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবাল। তিনি ছাড়াও মোট ১৬ জন পরিচালক প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে মীর হেলাল উদ্দিন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার ফলে সেখানে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে টিকে যান গায়ক আসিফ আকবর। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নির্বাচিত হচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে জনপ্রিয় আসিফ আকবরের এই পদক্ষেপ অনেকের কাছেই বিস্ময়ের। সংগীতের মঞ্চ থেকে দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে তার পদার্পণকে ভিন্নধর্মী এক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, ক্রিকেটের সঙ্গে সরাসরি মাঠ পর্যায়ের সম্পৃক্ততা না থাকলেও আসিফ আকবরের জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা বিসিবির কাজে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকেও এসেছে একই ধরনের ফলাফল। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন আহসান ইকবাল চৌধুরী। অর্থাৎ চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে দুটি পদই লড়াই ছাড়াই পূর্ণ হলো।
এই ঘটনাকে ঘিরে ক্রীড়া মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদল মনে করছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তামিম ইকবালের মতো ক্রিকেট তারকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার দুঃখজনক, কারণ তার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিসিবির নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, গায়ক আসিফ আকবরের মতো বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের আগমন বিসিবিতে নতুন রঙ ছড়াতে পারে।
উল্লেখ্য, বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন সাধারণত বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে থাকে। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠনের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা এতে অংশ নেন। তবে এবারের নির্বাচনে একাধিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়া বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
আগামী ৬ অক্টোবরের নির্বাচনে এখন বাকি পদগুলোতে ভোট হবে। দেশের ক্রীড়া অঙ্গন ইতোমধ্যেই তাকিয়ে আছে এই নির্বাচনের দিকে। তবে গায়ক আসিফ আকবরের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক হওয়া নিঃসন্দেহে এবারের বিসিবি নির্বাচনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যেখানে ক্রীড়া অঙ্গনের বাইরের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরা ক্রীড়া সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তবে বিসিবির মতো বড় এবং প্রভাবশালী সংস্থায় একজন জনপ্রিয় গায়কের সরাসরি পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্তি বিরল ঘটনা। ক্রিকেটের মাঠে তার সরাসরি কোনো অর্জন না থাকলেও দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে তার অবদান এবং জনসংযোগ ক্ষমতা হয়তো বিসিবিকে একটি নতুন মাত্রা দিতে সক্ষম হবে।
আগামী দিনগুলোতে আসিফ আকবর কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে। তবে ক্রিকেট ভক্তরা এখন অপেক্ষায় আছেন—গানের মঞ্চে যিনি একসময় অগণিত ভক্তকে মুগ্ধ করেছেন, তিনি কি বিসিবির নীতিনির্ধারণের মঞ্চেও একইভাবে আলো ছড়াতে পারবেন?