নির্বাচন কমিশনের কড়া বার্তা—যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক অতীত তিনটি নির্বাচনকে বৈধ বলেছে, তাদের এবার পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হবে না। আগারগাঁওয়ে কানাডার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি এ কথা জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যারা বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনকে ‘বৈধ’ বলে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট দিয়েছে—তাদের আর বাংলাদেশের নির্বাচনী মাঠে পর্যবেক্ষক হিসেবে দেখা যাবে না। নির্বাচন কমিশন এমন ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেবে না।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কানাডার রাষ্ট্রদূত অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন সিইসি।
নাসির উদ্দিন বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করে আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছে। তবে আমরা কিছু শর্তে পর্যবেক্ষণ মঞ্জুর করব। বিশেষ করে যেসব পর্যবেক্ষক অতীত তিন নির্বাচনে পরিস্থিতি যাচাই না করেই তা বৈধ বলেছে, তাদের এবার পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই এমন পর্যবেক্ষক যারা নিরপেক্ষ ও পেশাদারভাবে কাজ করবে। গত তিনটি নির্বাচনের ফলাফল ও ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। অথচ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা না বুঝেই ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে, যা জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
কানাডার রাষ্ট্রদূত অজিত সিং নির্বাচনের প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, “আমরা ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি তা রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, প্রচার, এবং কারিগরি ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়েও আমরা অবহিত করেছি।”
বৈঠকে আগামী নির্বাচনের সময় এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সিইসি বলেন, এআই-এর ভুল ব্যবহারে যেন নির্বাচনের স্বচ্ছতা ক্ষুণ্ন না হয় সে বিষয়ে কানাডার পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, কানাডা আমাদের নির্বাচনী প্রচেষ্টা এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কমিটমেন্টে সন্তুষ্ট। তারা ভোটগ্রহণ পদ্ধতিতে কিংবা ব্যালট প্রজেক্টে সহযোগিতার আগ্রহ দেখিয়েছে।
নাসির উদ্দিনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে নির্বাচন কমিশন এবার আর বিদেশি চাপ, পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব বা আগের ‘ভালো সার্টিফিকেট’ দিয়ে প্রভাবিত হবে না। বরং এমন পর্যবেক্ষকদের বেছে নেওয়া হবে যারা আদর্শ মানদণ্ড অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে সক্ষম।
এতে বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন এবার যে কোনো বিতর্ক এড়াতে চায় এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য করতে নিরলসভাবে কাজ করছে।