চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামে বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির জেলা আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য গোলাম আকবর ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। রাজনৈতিক আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। তাঁরা হলেন রাউজান উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ, বাগোয়ান ইউনিয়ন কৃষক দলের সহসভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল, বাগোয়ান ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম চৌধুরী, যুবদলের সহসভাপতি রবিউল হোসেন এবং স্থানীয় বিএনপির কর্মী মোহাম্মদ সোহেল। আহতদের স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই এলাকা জুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। খবর পেয়ে রাউজান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তবে ততক্ষণে অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি বলে জানিয়েছেন রাউজান রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুহাম্মদ বেলায়াত হোসেন। তিনি বলেন, “এটি রাজনৈতিক আধিপত্যের সংঘর্ষ হতে পারে। পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা চলছে। পুলিশ তদন্ত করছে।”
অন্যদিকে, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান দাবি করেছেন, তাদের পক্ষেরও অন্তত দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে তিনি জানান, হামলার পেছনে পরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় কমিটির নজরে আনা হয়েছে।
রাউজানে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন নয়। গত এক বছরে এখানে ঘটে গেছে একের পর এক রক্তাক্ত ঘটনা। কখনো প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে, কখনো ছুরিকাঘাত কিংবা পিটিয়ে খুন করা হয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের। পুলিশি তদন্ত চললেও এখনো পর্যন্ত কোনো অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি, উদ্ধার হয়নি কোনো অস্ত্রও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে। একটি পক্ষ অন্য পক্ষকে দমন করার জন্য ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছরের আগস্টের পর থেকে রাউজানে কমপক্ষে ১৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক। সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর যুবদল কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ৭ অক্টোবর বিএনপির কর্মী আবদুল হাকিমকে একইভাবে গুলি করে খুন করা হয়। এসব ঘটনায় জড়িতরা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলীয় শৃঙ্খলার অভাব ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের হস্তক্ষেপের ঘাটতির কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
রাউজানের সর্বশেষ এই সংঘর্ষ আবারও প্রমাণ করল, দলীয় ভেতরকার বিভক্তি কতটা গভীরে প্রোথিত। আহতদের চিকিৎসা চলছে, আর পুরো এলাকায় এখনো বিরাজ করছে অজানা এক আতঙ্ক।



















