মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিএনপির ব্যানারের নিচে বসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ও বক্তব্য দেওয়ায় ১৯ বছরের ফাহিম ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর শনিবার রাতে মাগুরা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক যুবকের অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ব্যানারের নিচে বসে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী স্লোগান ‘জয় বাংলা’ দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি দ্রুতই পুলিশের নজরে আসে। শেষ পর্যন্ত ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম ফাহিম ইসলাম (১৯)। তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দাসুরা বাজার এলাকার বাসিন্দা মইনুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে কুলাউড়া পৌরসভার মাগুরা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফাহিম সম্প্রতি কুলাউড়া শহরে বিএনপির একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের ব্যানারের নিচে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বক্তব্য দেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি উচ্চস্বরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন এবং বলেন, “শীঘ্রই তিনি আসবেন।”
এই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হন—বিএনপির ব্যানারের নিচে বসে আওয়ামী লীগের স্লোগান দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বেশ অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তারা। ভিডিওটি রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দেয়।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক জানান, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। তিনি বলেন, “ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, ওই যুবক বিএনপির ব্যানারের নিচে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছেন। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় আমরা অভিযান চালাই।”
শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে পৌর শহরের মাগুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফাহিম ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম স্বীকার করেছেন যে, ভিডিওতে দেখা বক্তব্য ও স্লোগান তিনিই দিয়েছেন। তবে কেন এমনটি করেছেন—সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কোনো জবাব দেননি।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় রাজনৈতিক উসকানি, জনমনে বিভ্রান্তি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোববার (১০ আগস্ট) ফাহিমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, বিষয়টি হয়তো ব্যক্তিগত প্রচারের কৌশল, আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি একটি পরিকল্পিত উসকানি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ সমালোচনা করছেন, কেউ আবার বিষয়টিকে নিছক মজা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে ফাহিম ইসলামের পরিবার তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির কারণে বড় আকার নিয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নিষ্পত্তি করা হবে।
কুলাউড়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো এই ঘটনার আলোচনা চলছে। রাজনৈতিকভাবে বিপরীত মতাদর্শের প্রতীকী স্লোগান একই প্রেক্ষাপটে ব্যবহারের ঘটনা বিরল হওয়ায় এটি নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।