পুরান ঢাকায় এক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার পর, হেফাজতে ইসলাম বিএনপিকে শহীদ জিয়ার আদর্শে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। দলীয় চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক খুনোখুনির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে সংগঠনটি নতুন প্রজন্মের রাজপথে নামার আভাস দিয়েছে।
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বর। এখানেই ঘটে গেল এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড — যেখানে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই বর্বর ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ তাদের প্রতিক্রিয়ায় কেবল নিন্দা জানিয়ে থেমে থাকেনি, বরং তারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে দেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পেছনে দীর্ঘদিনের অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি দায়ী। তারা বলেন, বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে শ্রদ্ধা করে, তাহলে এখনই তাদের দলীয় অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এনে চাঁদাবাজি ও খুনোখুনি বন্ধ করতে হবে।
তারা আরও বলেন, এই রাজনৈতিক নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পুলিশ বাহিনীতে মৌলিক সংস্কার আনতে হবে। ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করে, দায়িত্বশীল, মানবিক ও পেশাদার সদস্যদের নতুন করে নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শুধু আরও অবনতির দিকেই যাবে।
‘জুলাই বিপ্লব’ এবং নতুন প্রজন্মের ভূমিকা
হেফাজতের বিবৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ঘটনার নাম নয় — এটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সূচনালগ্ন। নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে ছাত্র-জনতা এবং আলেম সমাজ সেই বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি। তারা বলেন, “যেখানে সরকার ও প্রশাসন ব্যর্থ, সেখানেই দেশপ্রেমিক জনতা এগিয়ে আসবে, এটা ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে। জুলাইয়ের বিপ্লব নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে।”
তারা বিএনপির উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের মধ্যে শহীদ জিয়ার আদর্শ এখন অনুপস্থিত। ক্ষমতার রাজনীতিতে চাঁদাবাজি, খুনোখুনির সংস্কৃতি চালিয়ে গিয়ে কখনোই দেশের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। সময় এসেছে আত্মসমালোচনার।”
আসন্ন হুঁশিয়ারি: আবারও রাজপথ কাঁপবে?
হেফাজতের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশে টিকে থাকতে হলে সবাইকে সুস্থ, মানবিক ও আদর্শভিত্তিক রাজনীতি চর্চা করতে হবে। অন্যথায় এই নতুন বিপ্লবী প্রজন্ম দেশের স্বার্থে আবারও রাজপথে নামতে দ্বিধা করবে না। যে আবেগ ও বোধ নিয়ে তারা পূর্বে রাজপথে নেমেছিল, তা আরও তীব্র ও সংগঠিত হয়ে ফিরে আসবে।”
সারসংক্ষেপে, এই বিবৃতিতে স্পষ্ট যে, হেফাজত শুধু একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠন হিসেবেই কথা বলছে না; বরং তারা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দায় নিয়ে ভবিষ্যতের বিপ্লবী ধারার দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। বিএনপির সামনে এখন কঠিন সময়—তারা কি জিয়াউর রহমানের মূল নীতিতে ফিরবে, নাকি নতুন প্রজন্মের প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে?