ঢাকার কেরানীগঞ্জে সড়ক সংস্কার প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী দাবি করেছেন, বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে চলা এ প্রকল্প থেকে অর্ধকোটি টাকা লোপাট হয়েছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও স্যুয়ারেজ বাদ দিয়ে ঢালাই দেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা সড়ক সংস্কার প্রকল্পকে ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, বিএনপি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ প্রকল্প থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাট হয়েছে। রাস্তা মেরামতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, স্যুয়ারেজ লাইন বাদ দিয়ে পলিথিন বিছিয়ে ঢালাই দেওয়া এবং পুরোনো ইট-পাথর পুনর্ব্যবহার—সব মিলিয়ে প্রকল্পটি পরিণত হয়েছে দুর্নীতির আখড়ায়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে প্রায় এক কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫৩৪ মিটার দীর্ঘ সড়ক মেরামতের অনুমোদন দেওয়া হয় দুই বছর আগে। দায়িত্ব পায় ঢাকার কিংডম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথমদিকে কাজটি আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের করলেও গত ৫ আগস্ট থেকে কাজটি কিনে নেন ঢাকা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোকাররম হোসেন সাজ্জাদের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাদের একটি সিন্ডিকেট।
এরপর থেকেই শুরু হয় নানা অনিয়ম। স্থানীয়দের অভিযোগ, দক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানো হয়। নতুন ঢালাই দেওয়ার আগে বালি না দিয়ে পলিথিন বিছানো হয়, যা সম্পূর্ণ নির্মাণ নীতিমালার লঙ্ঘন। তাছাড়া রাস্তা মেরামতে ব্যবহৃত হয়েছে পুরোনো ইট, পাথর, মাটি এবং আবর্জনা।
সংস্কারের জন্য নির্ধারিত ৫৩৪ মিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৪৫০ মিটার অংশে স্যুয়ারেজ লাইন থাকলেও বাকি ৮৪ মিটার অংশে কোনো স্যুয়ারেজ লাইন দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে পলিথিন বিছিয়ে ঢালাই দেওয়ায় সড়কের দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সড়ক মেরামতের নামে দুই বছর ধরে জনদুর্ভোগ বাড়ানো হয়েছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা, পিএম পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এ সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় মানুষকে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জিনজিরা সদর রোডের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ লাভু অভিযোগ করেন, বুড়িগঙ্গার সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কাজের দায়িত্বে থাকা সিন্ডিকেট সেটি বাস্তবায়ন না করে পুরোনো ঢালাই তুলে নতুন ঢালাই দিচ্ছে, যা জনস্বার্থবিরোধী।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা ও সাব-কন্ট্রাক্টর মোকাররম হোসেন সাজ্জাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কোনো অনিয়ম হয়নি। হয়তো শ্রমিকরা কিছু পুরোনো ইট-পাথর ব্যবহার করেছে। তবে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদের কিছুটা সময় দিন।”
অন্যদিকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, অনিয়মের ভিডিও প্রমাণ হাতে এসেছে। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সহকারী উপজেলা প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে সাব-কন্ট্রাক্টরেরা প্রকল্পটি চালাচ্ছে, অথচ উপজেলা প্রকৌশলী অফিসকে তারা কোনোভাবেই অবহিত করছে না। প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করেই কাজ পরিচালিত হচ্ছিল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিনাত ফৌজিয়া বর্তমানে চিকিৎসাধীন থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক সংস্কারের নামে কোটি টাকার প্রকল্প থেকে অর্ধকোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। তারা দ্রুত এ প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।