শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি যদি হাই কমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে, তবে জয়ের পর তাদের ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে।
দেশের আলোচিত অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় প্রায়ই সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মতামত দেন। এবার তিনি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলোর অবস্থান এবং প্রবাসী মহলের ভাবনা নিয়ে একটি দীর্ঘ বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট দিয়েছেন। এই লেখায় তিনি বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, এনসিপি এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বুধবার নিজের ফেসবুকে দেওয়া সেই পোস্টে জয় উল্লেখ করেন, বিদেশে বসবাসরত অনেক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি লক্ষ্য করেছেন, তারা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি ব্যাপক আস্থা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে পারে, তবে আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং এমন পরিস্থিতি দেশে নতুন করে বিভক্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
প্রবাসীদের ধারণা অনুযায়ী, সংসদে এনসিপি ও জামায়াতকে অন্তত ১০০ আসনে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, ইউনুস সরকারের হাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকলেও জনসমর্থনের ঘাটতির কারণে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তাই ড. ইউনুসকে আরও সময় দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।
জয়ের লেখায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক মহলে সেনাবাহিনীকে ঘিরে কিছুটা সংশয় রয়ে গেছে। যদিও এনসিপি মাঠের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিদেশিদের সহানুভূতি কুড়িয়েছে, তবুও তাদের কিছু বক্তব্য ও আচরণ অনেককে বিরক্ত করেছে। অন্যদিকে জামায়াতের সংগঠিত ভূমিকা অনেকের কাছে প্রশংসনীয় হলেও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে এখনো বড় ধরনের দ্বিধা রয়ে গেছে।
বিএনপির প্রসঙ্গ টেনে জয় লিখেছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্যে বিদেশিরা সন্তুষ্ট হলেও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আচরণে অনেকে অতিষ্ঠ। তার ভাষায়, বিএনপি ভারসাম্যহীন অবস্থায় পড়েছে, যেখানে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির বড় ফারাক স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তিনি বলেন—“যেখানে তারেক রহমান প্রতিশোধ নয়, প্রতিরোধ নয়—এমন বার্তা দিচ্ছেন, সেখানে অনেক কর্মী উল্টো প্রতিশোধ ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের আগে যদি হাই কমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে তারা এমন আচরণ চালিয়ে যায়, তবে নির্বাচনে জয়ের পর তাদের ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে।”
নিজের পোস্টে জয় পরিষ্কার করেছেন, এটি তার ব্যক্তিগত মতামত, কোনো বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ নয়। তিনি লিখেছেন—“আমি সাধারণ একজন মানুষ, রাজনীতি বিশ্লেষণ করার মতো বিশেষজ্ঞ নই। আমার এই লেখাকে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই দেখা উচিত। যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে আশা করি, লেখার ইতিবাচক দিক থেকে অনেকে উপকৃত হবেন।”
উল্লেখ্য, গেল ঈদুল ফিতরে শাহরিয়ার নাজিম জয় অভিনয় ও নির্মাণ করেছেন ওয়েব সিরিজ ‘পাপ কাহিনী’। এ কাজে তার সঙ্গে অভিনয় করেছেন রুনা খান, মৌসুমী মৌ, তানজিয়া মিথিলা প্রমুখ। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করে থাকেন, যা তরুণ প্রজন্মের মাঝে আলোচনা সৃষ্টি করে।
জয়ের এই সর্বশেষ বিশ্লেষণধর্মী লেখাটি আবারও প্রমাণ করেছে, দেশের রাজনীতির বাইরে থেকেও তিনি সময়ের আলোচিত ঘটনাবলিকে নিয়ে সরাসরি মতামত দিতে দ্বিধা করেন না। বিশেষ করে বিএনপির কর্মীদের আচরণ নিয়ে তার মন্তব্য ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনেকে এটিকে রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ হিসেবে দেখছেন, আবার কারও মতে জয় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।