বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আজই নিচ্ছে সরকার। আপত্তিকর ভিডিওসহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর আজ বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলেই সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি)-এর সচিব নাজমা মোবারেক।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঠানো আনুষ্ঠানিক চিঠির ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এফআইডি সচিব বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির প্রেক্ষিতে আমরা আজকেই বিএফআইইউ প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা অচিরেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হবে।”
এছাড়া শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো খতিয়ে দেখতে আজই একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই কমিটি বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে এবং সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সচিব।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাহীনুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে বুধবারও তিনি যথারীতি অফিস করেছেন, যা বিষয়টিকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএফআইইউ প্রধানকে যেহেতু সরকার নিয়োগ দেয়, তাই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ারও কেবল সরকারেরই হাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা গভর্নর সরাসরি তাকে ছুটি, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা রাখেন না। সর্বোচ্চ তারা সরকারের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করতে পারেন। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার ব্যবস্থা নেয়।
কর্মকর্তারা আরও জানান, যে আইনের অধীনে বিএফআইইউ প্রধানকে নিয়োগ দেওয়া হয়, সেই আইনে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর কোনো বিধান নেই। সরকারের হাতে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার একাধিক বিকল্প রয়েছে—যেমন তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা, চাকরিচ্যুত করা বা সরাসরি বরখাস্ত করা। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির প্রেক্ষিতেই আজ সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে অগ্রসর হয়েছে।
শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠেছে তার মধ্যে রয়েছে আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের ঘটনা, দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং পেশাগত শৃঙ্খলাভঙ্গ। দেশের আর্থিক খাতে সর্বোচ্চ সংবেদনশীল পদে থাকা একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের এই দ্রুত সিদ্ধান্ত আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার একটি বড় পদক্ষেপ। কারণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএফআইইউ-এর কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বিশেষ করে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে এই সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর প্রধানকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিলে তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
আজকের এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। এখন সবার নজর থাকবে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এবং সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তে।