আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী-সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। শনিবার প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই প্রথম কোনো মামলায় তাকে সাজা দিলেন বাংলাদেশের আদালত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সংশ্লিষ্টদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। শনিবার (৯ আগস্ট) এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে তা পুলিশ প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা এমনসব বক্তব্য দিচ্ছেন, যা সরাসরি বিচারকাজে বাধা সৃষ্টি করছে।
এর আগে গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও দুই মাসের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, মামলার বাদী ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সরাসরি হুমকি দেওয়ার কারণে এ সাজা দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মোহিতুল হক চৌধুরী। রায়ে বলা হয়, তারা আদালতে আত্মসমর্পণের পর বা গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকে সাজা কার্যকর হবে। বাংলাদেশের কোনো আদালতের ইতিহাসে এই প্রথম শেখ হাসিনাকে সাজা দেওয়া হলো। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটি প্রথম সাজার রায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মামলার শুনানিতে শেখ হাসিনা ও শাকিলের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তি উপস্থাপন করেন। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং প্রসিকিউটর তানভীর জোহা।
গত ১৯ জুন ট্রাইব্যুনাল মামলার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে নিয়োগ দেন। এর আগে ৩ জুন মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল, যেখানে শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার শাকিল আকন্দ বুলবুলকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, “২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি” — এমন একটি অডিও বক্তব্য শেখ হাসিনার নামে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষায় অডিওটি তারই বলে প্রমাণিত হয়।
৩০ এপ্রিলের শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে ২৫ মে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি এবং আইনজীবীর মাধ্যমেও কোনো ব্যাখ্যা দেননি। পরে ট্রাইব্যুনাল সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩ জুন সরাসরি হাজির হয়ে অভিযোগের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিজ্ঞপ্তি দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়, যেখানে অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য উভয় আসামিকে শেষবারের মতো আহ্বান জানানো হয়।
এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিচার ব্যাহত করার অপরাধে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেত্রীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর হলো। আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রায় ভবিষ্যতে আদালত অবমাননা ও বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।