প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সব প্রস্তুতি চলছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। শনিবার সকালে রাজশাহীতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। তার বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী দল হিসেবে সক্রিয় ছিল।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। তাদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিচার চলতে থাকা অবস্থায় তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। “বিচার কীভাবে অগ্রসর হয়, দেখা যাক”—বলে তিনি বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করছে বলে ইঙ্গিত দেন।
তিনি আরও জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য কমিশন দিনরাত কাজ করছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, অনেক রাজনৈতিক দল যে আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতির দাবি তুলছে, সেটি সংবিধানে নেই। তাই এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করা সম্ভব নয়। “আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না,”—বলে তিনি রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াতে না চাওয়ার ইঙ্গিত দেন।
নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। “স্ট্রাইকিং ফোর্স নয়, বরং সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। যাতে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সরাসরি দায়িত্ব পালন করতে পারে।” এই উদ্যোগ নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এছাড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) পদায়ন নিয়ে কোনো পরিবর্তনের চিন্তা নেই বলেও সিইসি জানান। তিনি বলেন, “যারা এর আগে নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন, তারাই থাকবেন। প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিইসি’র এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলের নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। অন্যদিকে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক আরও বাড়তে পারে।
নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণা দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় যোগ করেছে। এখন সবার দৃষ্টি আদালতের দিকে—বিচারের রায় কী হবে, তার ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।