খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল :টাঙ্গাইল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে একটি কলেজে ৩ জন অধ্যক্ষ কর্মরত আছেন। দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে মিছিল মানববন্ধন, মামলা অভিযোগ করতে গিয়ে কলেজের ছাত্রী সংখ্যা কমে গেছে।
উপজেলা সদরে অবস্থিত লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজে ৩ জন প্রতিষ্ঠান প্রধান (প্রিন্সিপাল) কর্মরত আছেন। প্রিন্সিপাল হাসান আলী সরকার নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে তার পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার হন। তৎস্থলে উপাধ্যক্ষ মোঃ গোলাম রব্বানীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। প্রিন্সিপাল হাসান আলী সরকার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হন। আদালত তার পক্ষে রায় প্রদান করলে নাছোড় বান্ধা উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম রব্বানী আপিল করে। আপিল খারিজ হয়ে প্রিন্সিপাল হাসান আলী সরকার কলেজে যোগদান করার অনুমতি পায়। এমতাবস্থায়, উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম রব্বানী হাই কোর্টের স্মরণাপন্ন হয়। হাই কোট অধ্যক্ষ হাসান আলীকে কলেজে স্বপদে বহালের নির্দেশ দেয়। হাইকের্টের নির্দেশ পেয়ে জাতীয় বিশ্বদ্যিালয় এক চিঠিতে উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম রব্বানীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রিন্সিপাল হাসান আলী সরকারকে স্বপদে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ হাই কোর্ট ও জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ের আদেশ পালন না করায়, প্রিন্সিপাল হাসান আলী সরকার নিজ দায়িত্বে তার কক্ষের তালা ভেঙে অফিসে বসেন।
লোকমান ফকির মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান না করে। অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার এবং উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম রব্বানীকে দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশ দিয়ে সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমান আখুন্দকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আখুন্দ ওমরা হজ পালন করতে পবিত্র কাবা শরীফে যাওয়ার আগে ফরিদুল ইসলামকে চলতি দায়িত্বে রেখে যান। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আখুন্দ ফিরে আসার পর চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত ফরিদুল ইসলাম দায়িত্ব ফিরিয়ে না দিয়ে জোর পূর্বক চেয়ারে বসে আছেন।
অপর দিকে অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার উচ্চ আদালতের রায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত চিঠির বলে তালা ভেঙে তার অফিস দখল করেছেন।
উপাধ্যক্ষ মোঃ গোলাম রব্বানী ছাড়াও বর্তমানে কলেজে ৩ জন অধ্যক্ষ অফিস করছেন। অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আখুন্দ ও চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত ফরিদুল ইসলাম।
অধ্যক্ষ হাসান আলী বলেন, আমি কলেজের বৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। তারপরও উচ্চ আদালতের রায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত চিঠির বলে আমি কলেজে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছি।
মিজানুর রহমান আখুন্দ বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় দেড় মাসের ছুটি নিয়ে ওমরা করতে গেলাম। আসার পরে আমাকে আর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি না দিয়ে অন্য জনকে কেনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হলো তা আজো আমাকে জানানো হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলামকে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
এ ব্যাপারে কলেজ গর্ভনিং কমিটির সভাপতি ডা. রেশমার সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম দিন ফোন রিসিভি করে ব্যস্ততার কথা বলেন এবং পরের দিন ফোন করতে বলেন। পরের দির ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি।
সভাপতির অনুপস্থিতিতে স্থানীয় ভাবে গভণিং বডির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ মিয়া কলেজের কর্মকান্ড দেখা শোনা করেন। তার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেন নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, আমরা হাসান প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে থানা, আর্মি ক্যাম্প ইউএনও অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও কোনো তদন্ত করাতে পারি নাই। তার পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদানের অনুমতি রয়েছে। তিনি যথারীতি বেতনও পাচ্ছেন। তাই তাকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হলে কলেজের শৃংঙ্খলা ফিরে আসবে। হাসান প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল মানববন্ধন, মামলা অভিযোগ করতে গিয়ে কলেজের ছাত্রী সংখ্যা কমে গেছে।