দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, মাসিক ভাতা এবং সামাজিক প্রভাবের আশায় ভুয়া পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করে নিচ্ছেন অসংখ্য ব্যক্তি। গত ১৫ বছরে নতুন তালিকা তৈরির মাধ্যমে এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। এতে রাষ্ট্রের আর্থিক চাপও বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ
সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,
-
১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৮৬,০০০ জন
-
২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,০৮,০৫০ জন
এই সময়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই সংখ্যা কমার কথা থাকলেও উল্টো বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার।
৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,
-
৯০ হাজারের বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের অনেকেই ভাতা পাচ্ছেন নিয়মিত
-
এদের পেছনে বাৎসরিক ব্যয় প্রায় ২,৪০০ কোটি টাকা
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসাব
বর্তমানে একজন মুক্তিযোদ্ধা বছরে পান প্রায় ২,৬৭,০০০ টাকা ভাতা ও সম্মানী।
-
মাসিক ভাতা: ২০,০০০ টাকা
-
দুই ঈদে: ১০,০০০ টাকা করে
-
২৬ মার্চ: ৫,০০০ টাকা
-
বাংলা নববর্ষ: ২,০০০ টাকা
এই ভাতার আওতায় ভুয়া ৯০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা বছরে সরকারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
গেজেট বাতিল ও মামলা
জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে,
-
২৭১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে বয়স, গেজেট জালিয়াতি ও সনদ অসঙ্গতির অভিযোগে
-
২,১১১ জনের সনদ বাতিল করা হয়েছে
-
১৫ বছরে গেজেট বাতিল হয়েছে ৩,৯২৬ জনের
কোটা সুবিধা ও সরকারি চাকরি
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরিতে রয়েছেন ৮৯,২৩৫ জন। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যেমন অবহেলিত হচ্ছেন, তেমনি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া তরুণরাও বঞ্চিত হচ্ছেন।
রাষ্ট্রের আর্থিক ও নৈতিক ক্ষতি
এই ভুয়া সনদধারীদের কারণে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবময় অধ্যায়ের মূল্যবোধ ও মর্যাদাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পর্যালোচনা করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, নতুবা রাষ্ট্রীয় অর্থ ও সম্মান দুটোই বিপন্ন হবে।