close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভু য়া প্রতিবন্ধী কার্ড বাণিজ্য, সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভাতা আত্মসাৎ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
In Jessore’s Monirampur, healthy individuals were listed as disabled to secure government allowance cards in exchange for bribes—locals demand justice.

যশোরের মনিরামপুরে সুস্থ মানুষদের প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ভাতার কার্ড করে দিলেন সাবেক মহিলা মেম্বার। টাকা নিয়ে কার্ড দেওয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

২০২৪ সালের যশোরের মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নে সরকার কর্তৃক দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় থাকা ৮১ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এক প্রভাবশালী সাবেক নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সুস্থ মানুষের নাম ভাতাভুক্ত করার ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে, যা প্রকাশ্যে আসার পর পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গৃহবধূ শিউলি রানী দে জানান, “হীরা মেম্বার বলল, টাকা দিলে একটা কার্ড করে দেবে। আমি ভেবেছিলাম অন্য কোনো সুযোগ। এখন দেখি, আমাকে প্রতিবন্ধী দেখিয়ে কার্ড করেছে। আমি তো সুস্থ মানুষ!”

শিউলি রানীর মতো সাজেদা বেগম, কহিনুর বেগম, খলিলুর রহমান, শাহিনারা খাতুন পান্না, খালেক মোল্যা ও তাহমিনা বেগম — সকলেই সুস্থ থাকা সত্ত্বেও এখন সরকারি নথিতে ‘প্রতিবন্ধী’। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নিগার সুলতানা হীরা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে এসব ভুয়া কার্ড তৈরি করে দিয়েছেন।

২০২৪ সালে উপজেলা সমাজসেবা অফিস নেহালপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় চার শতাধিক আবেদন সংগ্রহ করে। সেখান থেকে ৮১ জনকে নির্বাচিত করা হয়। অথচ অনেক প্রকৃত প্রতিবন্ধী এই তালিকার বাইরে রয়ে যান।

ইউনিয়নের তথ্যসেবা কেন্দ্রের কর্মী আসাদুল হক চঞ্চল, ইউপি সদস্য শাহিদুল ইসলাম, সংরক্ষিত সদস্য লাকি খাতুন এবং আলেয়া বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, তারা এ তালিকা তৈরিতে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। বরং সাবেক সদস্য হীরা এককভাবে অর্থের বিনিময়ে তালিকা প্রস্তুত করেছেন।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাজেদা বেগম বলেন, হীরা মেম্বার জরিপ ও অনলাইনের নামে আমার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। বলেছিলেন কার্ড হবে। কিন্তু সেটা যে প্রতিবন্ধী কার্ড হবে, তা জানতাম না। আমি তো সুস্থ।

তালিকায় কহিনুর বেগম ও খলিলুর রহমান — উভয়ই স্বামী-স্ত্রী — রয়েছেন প্রতিবন্ধীর তালিকায়। একইভাবে ৩৯ ও ৪০ নম্বর সিরিয়ালে থাকা খালেক মোল্যা ও তাহমিনা বেগমও দম্পতি এবং সুস্থ। পান্না নামে এক গৃহবধূর স্বামী বলেন, “পান্না কখনোই প্রতিবন্ধী ছিলেন না। হীরা মেম্বার তিন হাজার টাকা নিয়ে কার্ড তৈরি করে দিয়েছেন।

ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি এম খলিলুর রহমান বলেন, “আমি শুনেছি, সাবেক সদস্য হীরা টাকা নিয়ে কার্ড দিয়েছে। সমাজসেবা অফিস যেন তদন্ত করে সঠিকদেরই কার্ড দেয় — এটাই আমাদের দাবি।

নেহালপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শওকত সরদার বলেন, আমি হীরা মেম্বারকে বহুবার সতর্ক করেছি। তিনি সমাজসেবা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস ম্যানেজ করে এসব করেছেন।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত হীরা মেম্বার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি শুধু আবেদনগুলো জমা দিয়েছি, কার কার্ড পেলেন তা অফিস যাচাই করেছে।

মনিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। তবে অভিযোগ পেলে যাচাই করে প্রকৃত অযোগ্যদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

এই ঘটনার মাধ্যমে শুধু সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি, বরং প্রকৃত অসহায় প্রতিবন্ধীদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। টাকা দিয়ে সুস্থ মানুষকে ‘প্রতিবন্ধী’ বানানোর এই দুর্নীতি সমাজে গভীর সংকট তৈরি করছে। এলাকার মানুষ দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।

Nessun commento trovato