আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশের জন্য ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নজরদারি হবে আরও কঠোর।
আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে পুলিশের জন্য ৪০ হাজার বডি-ওয়্যার ক্যামেরা সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো ভোটের দিন মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং প্রমাণনির্ভর করা।
রোববার (১০ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বডি ক্যামেরা সংগ্রহের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই ডিভাইসগুলো মূলত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সংবেদনশীল ভোটকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে, যেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি থাকে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গতকাল শনিবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরী এবং ফয়েজ তৈয়ব আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, বডি ক্যামেরা সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য একটি বিশেষ টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এসব ক্যামেরা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংযুক্ত থাকবে, যাতে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাই রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা যায়।
বডি ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সময় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে কোনো অভিযোগ বা বিতর্কের ক্ষেত্রে ভিডিও প্রমাণ কাজে লাগানো যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে অপ্রয়োজনীয় সংঘর্ষ, অনিয়ম বা ভীতি প্রদর্শনের মতো ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
সরকারি সূত্র বলছে, এই বডি ক্যামেরাগুলো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এবং দীর্ঘ সময় ভিডিও ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া এগুলোতে নাইট-ভিশন সুবিধা থাকায় রাতের ভোটকেন্দ্র বা বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতিতেও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই উদ্যোগ ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে এবং তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভায় বলেন, “নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচনী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি নতুন প্রযুক্তিগত ধাপ যুক্ত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে বহু বছর ধরেই বডি ক্যামেরা ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, আর এবার বাংলাদেশও সেই ধারায় যোগ দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এই ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা এক নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।