close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ভোটের পথেই বদলে যাবে বাংলাদেশ: তরুণদের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনর্জাগরণের ডাক......

Touhid Sarkar avatar   
Touhid Sarkar
শাহাদাত হোসেন শাকিল যুগ্ম আহ্বায়ক, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত ইস্যু হলো — একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন।.......

অতীত আমাদের শিক্ষা দেয় — কখন আস্থা তৈরি হয়, আবার কিভাবে তা হারায়

২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮৭.১৩%, যার মধ্যে নারী ভোটার ছিল প্রায় ৫১%। সেনাবাহিনীর সহায়তা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন এবং ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সেই নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু মাত্র ছয় বছর পর ২০১৪ সালের নির্বাচন সেই আস্থার ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা এবং মাত্র ৩৯–৪০% ভোটার উপস্থিতি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। অনেকে বলেন, প্রকৃত ভোটার উপস্থিতি ছিল ১০%-এরও নিচে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশা আরও একবার ধাক্কা খায়। সরকার দাবি করেছিল ৮০% ভোটার উপস্থিতি, কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছিল যে অন্তত ৫১% আসনে অনিয়ম হয়েছে। এসব ঘটনায় জনগণের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক বিমুখতা ও হতাশা তৈরি হয়।

তরুণরা কেন রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে?

 বাংলাদেশের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২.৩৭ কোটি, যার মধ্যে ১৮–৩৫ বছর বয়সী তরুণ ভোটার রয়েছে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি। অথচ এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮–২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ৭৬.৪% কখনোই জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেননি।

এটি কেবল রাজনৈতিক উদাসীনতা নয়, বরং আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর তাদের গভীর অনাস্থার প্রকাশ। তরুণরা আজ রাজনীতিকে আর আগের মতো ‘আলোচনার টেবিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্র’ বলে মনে করে না। বরং তারা এটি দেখছে একরোখা ক্ষমতার খেলা হিসেবে, যেখানে সাধারণ মানুষের মতামতের কোনো জায়গা নেই।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনর্গঠনের ডাক এক নতুন আশার বাতি জ্বালিয়েছে। ছাত্রদল ও যুবদলের টানা ১৭ বছরের সংগ্রাম, ত্যাগ ও দৃঢ়তায় গড়ে উঠেছে নতুন এক রাজনৈতিক মেরুকরণ।

লন্ডনে থেকেও তারেক রহমান নিয়মিত ভার্চুয়ালি দেশের ছাত্র, যুব, পেশাজীবী, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গেও সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ আগস্টের পরবর্তী নিরাপদ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনের রূপরেখা দিয়ে তিনি তরুণদের মাঝে নতুন করে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছেন।

বর্তমান তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিকে আর কেবল দলীয় পরিচয়ের বাইনারি যুদ্ধ হিসেবে দেখছে না। তারা চাইছে সমান সুযোগ, ন্যায্যতা, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, ইতিবাচক প্রচারণা এবং সংগঠনের ভিত্তিতে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে উঠছে।

তরুণদের এই নতুন চেতনা গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কেননা, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্র কাগজে-কলমে থাকে, বাস্তবে নয়। তরুণরাই সেই শক্তি, যারা রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। 

সময়ের দাবি এখন একটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এটি কেবল একটি ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া নয় — এটি জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের পথ।

বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হলে, জনগণের হারানো আস্থা ফিরে আসবে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। তারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে, মতামত দেবে, নেতৃত্বে আসবে।

তাই আজকের প্রেক্ষাপটে তরুণদের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ সম্ভব। তরুণদের সজাগ, সক্রিয় ও সচেতন অংশগ্রহণই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার মূল চালিকাশক্তি হবে।

বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে একদিকে আছে হতাশা, অনিশ্চয়তা, আরেকদিকে আছে সম্ভাবনা ও পরিবর্তনের সুযোগ। এই পরিবর্তন আসবে যদি আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আবারও প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আর সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতে হবে দেশের তরুণ প্রজন্মকে।

 

তরুণরাই পারে ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন পথ দেখাতে, একটি মর্যাদাপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে।

Комментариев нет