বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছেন ব্যবসায়ী এস আলম।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে নেমেছে সরকারঘনিষ্ঠ কিছু মহল। এরই অংশ হিসেবে দিল্লিতে বসে ব্যবসায়ী এস আলম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, “শুধু শেখ হাসিনা নন, বরং কিছু রাজনৈতিক মহলও নির্বাচন বানচালের নানা চক্রান্তে লিপ্ত। নতুন নতুন দাবি তুলে গণতন্ত্রপন্থী শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে।”
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকারের ভেতরের একটি প্রভাবশালী অংশ সচেতনভাবে চেষ্টা করছে যাতে গণতান্ত্রিক শক্তি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে না পারে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে এবং জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তার মতে, দেশবাসীর প্রকৃত প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, “আজকে নির্বাচন বানচালের জন্য কোটি কোটি টাকা হাতবদল হচ্ছে। দিল্লিতে গিয়ে এস আলম ২৫০০ কোটি টাকা দিয়ে এসেছে শেখ হাসিনাকে—এটা কি জনগণের কল্যাণে? নাকি গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য বিদেশি শক্তিকে পাশে নেওয়ার কৌশল?”
ফখরুল মনে করেন, এ ধরনের গোপন লেনদেন শুধু দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি এমন চক্রান্ত চলতে থাকে তবে জনগণই এর জবাব দেবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া নষ্ট করতে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব জুলাই সনদ সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “অযথা জটিলতা সৃষ্টি করে এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হলে তা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ হবে। তাই সবার উচিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা।”
সভায় উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মী ও অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে ফখরুল আরও আহ্বান জানান, প্রত্যেকে যেন যার যার অবস্থান থেকে সজাগ ও সতর্ক থাকে। “এখন আর অবহেলার সুযোগ নেই। প্রতিটি ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে ফখরুলের এই বক্তব্য তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ অভিযোগ কেবল একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং সরকারের ভেতরে-বাইরে চলমান অস্থিরতার প্রতিফলন। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এমন সংবেদনশীল অভিযোগ শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকেই উত্তপ্ত করবে। এর প্রভাব আন্তর্জাতিক মহলেও পড়তে পারে। কারণ বিদেশি রাজধানীতে টাকা লেনদেন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কেবল দেশের ভেতরেই নয়, বাইরে সম্পর্কের ওপরও চাপ সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশ এখন যে রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হতে পারে একমাত্র সমাধান। অন্যথায়, ষড়যন্ত্র, টাকা লেনদেন এবং গোপন চুক্তি দেশের গণতন্ত্রকে আরও গভীর সংকটে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।