ভিপি প্রার্থী কাদেরকে সমর্থন জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফের পোস্ট, সমালোচনায় ডিলিট..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Local Government Adviser Asif Mahmud sparked controversy after publicly supporting VP candidate Abdul Kader in the Dhaka University Daksu polls via Facebook. Facing backlash, he deleted the post.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সমালোচনার ঝড় উঠতেই দ্রুত তা ডিলিট করে দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এরই মাঝে নতুন এক বিতর্ক জন্ম দিয়েছে সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি ভিপি (সহসভাপতি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্ট প্রকাশের পর মুহূর্তেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে পড়ে তিনি তা মুছে দিতে বাধ্য হন।

মঙ্গলবার বিকালে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরের একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করে আসিফ মাহমুদ লেখেন—
“ডাকসুতে ভোটার হইনি, তবে প্রার্থীর আধিক্য দেখে মনে হচ্ছে ভোটার হওয়া উচিত ছিল।

শুধু তাই নয়, পোস্টের শেষে তিনি আব্দুল কাদেরকে ট্যাগ করে শুভকামনাও জানান। এই প্রকাশ্য সমর্থন মুহূর্তেই নজরে আসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহলের। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।

আব্দুল কাদের বর্তমানে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। ইতিমধ্যেই ভিপি পদে তার প্রার্থিতা ঘিরে আলোচনার ঝড় বইছিল। সেই অবস্থায় সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার প্রকাশ্য সমর্থন আরও বিতর্কিত করে তোলে নির্বাচনকে।

পোস্টের স্ক্রিনশট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—সরকার যদি নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে, তবে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

গণঅধিকার পরিষদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন,সরকারের একজন উপদেষ্টা ডাকসুর নির্দিষ্ট প্রার্থীর জন্য শুভকামনা জানাতে পারেন কীভাবে? এতে তো আশঙ্কা তৈরি হয় যে, সরকার হয়ত এই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এটাই কি সেই হস্তক্ষেপের নমুনা নয়?

তিনি আরও বলেন,একজন উপদেষ্টা প্রথমে পোস্ট দেন, পরে সমালোচনার মুখে পড়ে সেটি ডিলিট করে দেন—এটা কেমন গণতন্ত্র আর বাকস্বাধীনতার উদাহরণ? এতে প্রমাণ হয় যে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও ডাকসুর নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করতে চাইছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বহু বছর পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ভিপি ও অন্যান্য পদসহ মোট ৪৭১ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিতে যাচ্ছেন।

তবে নির্বাচনের আগে সরকারের উপদেষ্টার এমন বিতর্কিত অবস্থান নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, নির্বাচনটি যাতে কোনোভাবেই সরকার নিয়ন্ত্রিত মনে না হয়, তার জন্য সবারই নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা জরুরি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন আসিফ মাহমুদ। অনেকেই মনে করছেন, তার এই পদক্ষেপ ভোটের আগে অযথা বিতর্ক তৈরি করেছে। যদিও তিনি পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছেন, তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় থামছে না। শিক্ষার্থীদের দাবি, ডাকসুর মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, বিশেষ করে সরকার–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের।

এখন সবার দৃষ্টি নির্বাচনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রগুলোর দিকে। শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছেন—ভোটের দিন প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয় কিনা, নাকি এ বিতর্ক নির্বাচনকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

 

No comments found