রাজনৈতিক চরিত্র হননের চেষ্টা নাকি ফেক ভিডিও দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির ষড়যন্ত্র? সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একটি এডাল্ট ভিডিও। আর সেটিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে এক গভীর বিভ্রান্তি।
ভিডিওটির শিরোনামে লেখা ছিল — ধানমণ্ডির যুব মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক শায়লা শারমিন চৌধুরীর শরীর প্রচার করা দেখুন। যেটি দেখে সাধারণ দর্শকের মনে হতে পারে এটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর কোনো নেত্রীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ফুটেজ। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আসলে ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো নারীর নয় — বরং এটি ভারতীয় মডেল ও অভিনেত্রী আভা পাল-এর একটি পুরনো ভিডিও, যা ২০২২ সালের ২ অক্টোবর তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশন পরিবর্তন করে বিএনপির নেত্রী দাবিতে প্রচার করা হয়েছে— যা স্পষ্টভাবে মিথ্যা এবং মানহানিকর।
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভিডিওটি হুবহু মিলে গেছে আভা পাল নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে থাকা একটি পোস্টের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, সেই একই অ্যাকাউন্ট থেকে আগে-পরে আরও অনেক অনুরূপ ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যার সঙ্গে কোনোভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খান-এর সঙ্গে। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, “বিএনপির ‘যুব মহিলা দল’ নামে কোনো সংগঠনই নেই।” এমনকি বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, দলটির নয়টি সহযোগী সংগঠন ও দুটি অঙ্গ সংগঠন থাকলেও কোথাও ‘যুব মহিলা দল’ নামে কিছুই নেই।
বিএনপির ৯টি সহযোগী সংগঠন হলো
-
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল
-
জাতীয়তাবাদী যুবদল
-
জাতীয়তাবাদী মহিলা দল
-
জাতীয়তাবাদী কৃষক দল
-
জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল
-
জাতীয়তাবাদী ওলামা দল
-
জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল
-
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল
-
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা
২টি অঙ্গসংগঠন:
-
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
-
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল
তালিকায় কোথাও ‘যুব মহিলা দল’ নেই। ফলে এটি স্পষ্ট— এই ভিডিও ও তার সাথে যুক্ত করা পরিচয় পুরোটাই ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর।
বর্তমানে ডিজিটাল মিডিয়ায় চরিত্র হননের জন্য ভুয়া পরিচয়, এডাল্ট ভিডিও এবং বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন ব্যবহার করে যে ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এটি তার একটি বড় প্রমাণ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যে কোনো মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো— সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বুজে কিছুই বিশ্বাস করা যায় না।