চলতি বছরের এপ্রিলে ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তে ঘটে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাত। ১৮ দিন ধরে টানা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় উত্তপ্ত ছিল দুই দেশের সীমানা। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বাঁধার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এবারের সংঘাতে এক চরম লজ্জার পরিস্থিতির মুখে পড়ে ভারত। বিশ্বের অন্যতম আধুনিক সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত নিজেদের কৌশলগত প্রস্তুতির জায়গায় ব্যর্থ হয় পাকিস্তানের চতুর চালের কাছে।
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এখন ভারতের পক্ষ থেকে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এসেছে—এই যুদ্ধে পাকিস্তান একা ছিল না। বরং নেপথ্যে ছিল আরও দুই সামরিক শক্তিধর দেশ: চীন ও তুরস্ক। এই দুদেশ পাকিস্তানকে নানাভাবে সাহায্য করেছে বলে স্বীকার করেছেন ভারতের উপসেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং।
গত ৪ জুলাই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত “নিউ এজ মিলিটারি টেকনোলজিস” শীর্ষক এক প্রোগ্রামে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (FICCI) আমন্ত্রণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিস্ফোরক তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, “২৩ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে আমরা পাকিস্তানের পাশাপাশি চীন ও তুরস্কের সঙ্গে কার্যত পরোক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম। চীন পাকিস্তানকে শুধু অস্ত্র দেয়নি, বরং এই যুদ্ধে তাদের প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখেছে। আর তুরস্ক পাঠিয়েছিল প্রশিক্ষিত ড্রোন অপারেটর।”
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ হলেও, নেপথ্যে যুদ্ধ চালিয়েছে চীন ও তুরস্ক।
রাহুল আর সিং বলেন, চীন পাকিস্তানকে রীতিমতো “লাইভ ইনপুট” দিয়েছে। অর্থাৎ উপগ্রহের মাধ্যমে ভারতের সামরিক গতিবিধি জানিয়ে দিয়েছে তাদেরকে। এর একটি দৃষ্টান্ত টেনে তিনি জানান, যখন দুই দেশের ডিজিএমও (Director General of Military Operations) পর্যায়ে আলোচনা চলছিল, তখন পাকিস্তান জানায়, “আমরা জানি, আপনার অমুক ভেক্টর রেডি রয়েছে,” যা দিয়ে তারা ভারতের আগাম হামলা শনাক্ত করেছিল। অর্থাৎ চীন থেকে গোয়েন্দা তথ্য সরাসরি পাকিস্তানের হাতে পৌঁছে যাচ্ছিল।
ভারতের উপসেনাপ্রধান বলেন, “চীন আসলে পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছে পরীক্ষাগারের মতো। তারা তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রগুলো ভারতের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে কার্যকারিতা যাচাই করেছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানে ব্যবহৃত যেসব ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার-বিপর্যয়মূলক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে—তা মূলত চীন ও তুরস্কের সহায়তায় এসেছে। এদের মধ্যে তুরস্কের ড্রোন অপারেটররা এবং বিশেষ প্রশিক্ষিত টেকনিক্যাল ইউনিট পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ভারতে শুরু হয় তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২০ সালে চীন লাদাখ সীমান্তে স্থিতাবস্থা বদলে দেওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন চীনকে “ক্লিনচিট” দিয়েছিলেন?
তিনি বলেন, “আজ উপসেনাপ্রধান স্বীকার করছেন—চীন আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। তাহলে তখন প্রধানমন্ত্রী কেন চুপ ছিলেন?
এছাড়া উপসেনাপ্রধান রাহুল সিং নিজেই ভারতের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাও স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, “যুদ্ধ চলাকালে অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র সময়মতো পৌঁছায়নি। যার ফলে আমরা অনেক পরিকল্পিত হামলা চালাতে পারিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ভারতের জন্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো এক বাস্তবতা—যা দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন।
অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক প্রফুল্ল বক্সী বলেন, “এই দুর্বলতা শুধু একবারের সমস্যা নয়, আগেও এই নিয়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরেও অনেকে উদ্বেগ জানিয়েছেন। সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতা ভবিষ্যতে ভারতকে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।”
এই সংঘাত ভারতকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে—শুধু সামনের শত্রু নয়, পর্দার পেছনে থাকা মিত্রশক্তির প্রভাবও ভয়াবহ হতে পারে। চীন ও তুরস্ক যেভাবে পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছে, তা প্রমাণ করে—এই উপমহাদেশের ভূরাজনীতিতে যুদ্ধ এখন শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, বহুমুখী।
ভারতের উচিত হবে—শুধু প্রতিবেশী নয়, তাদের সহায়ক গোষ্ঠীকে নিয়েও নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করা।