নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে তরুণ, মুসলিম এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানির (Zohran Mamdani) জয়কে বিশ্বজুড়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমস্ত প্রতিকূলতা এবং ইসলামোফোবিয়ার প্রবল প্রচার সত্ত্বেও তাঁর এই জয় প্রমাণ করে যে, নীতি-ভিত্তিক এবং প্রগতিশীল রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের সমর্থন অর্জন করা সম্ভব।
জোহরান মামদানি মাত্র ৩৪ বছর বয়সে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর এই জয় শুধু ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে নয়, বরং তিনি যে নীতি এবং আদর্শের ওপর ভর করে রাজনীতি করেন, তার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। মামদানি নিজেকে একজন ডেমোক্র্যাট সোশ্যালিস্ট হিসেবে বর্ণনা করেন। তাঁর এই বিজয় প্রমাণ করে যে, রাজনীতিতে এখন আর শুধু নিরাপত্তা বা 'আমরা বিপদে আছি' এমন রোমান্টিক দর্শন নয়, বরং আবাসন, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং সুশাসনের মতো বাস্তব সমস্যাগুলিই প্রধান হয়ে উঠেছে।
-
ইজরায়েল লবির বিরোধিতা: নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনের প্রচারে প্রায় সব প্রার্থীই ইসরায়েল-পন্থী মতামত দিলেও, মামদানি স্পষ্টতই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একজন 'যুদ্ধাপরাধী' (War Criminal) এবং তিনি নিউইয়র্কে এলে তাঁকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা উচিত। তিনি ইসরায়েল লবির ফান্ডিং না নিয়েও নির্বাচনে জিতেছেন।
-
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতা: মামদানিকে থামানোর জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে 'কম্যুনিস্ট' এবং নিউইয়র্কের প্রতি 'বিরাট হুমকি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
-
ব্যক্তিগত আক্রমণ: মিডিয়া এবং বিরোধীরা তাঁকে 'জিহাদী', 'চরমপন্থী' এবং 'শরিয়া আইন বাস্তবায়নকারী' হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিল।
মামদানি তাঁর প্রচারে মূলত সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। তাঁর প্রধান নীতিগুলো হলো:
-
আবাসন সংকট: নিউইয়র্কের হাউজিং সংকটের কারণে ৫,০০,০০০ মানুষ গৃহহীন আশ্রয়কেন্দ্রে (Homeless Shelters) থাকে। এই সমস্যা সমাধানে তিনি 'রেন্ট ক্যাপ' (ভাড়া নিয়ন্ত্রণ) চালু করার কথা বলেন, যা বড় বড় আবাসন মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
-
অর্থনৈতিক সমতা: তিনি সরকারি অর্থায়নে গ্রোসারি স্টোর পরিচালনার কথা বলেন, যাতে মানুষ কম দামে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে।
-
ধনী কর: তিনি মিলিয়নেয়ার এবং বিলিয়নিয়ারদের ওপর মাত্র ২% অতিরিক্ত ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব দেন, যা দিয়ে শহরের উন্নয়ন করা সম্ভব।
-
বহুভাষিকতা: মামদানি একাধিক ভাষায় (হিন্দি, উর্দু, বাংলা, স্প্যানিশ, গুজরাটি এবং ইংরেজি) কথা বলতে পারেন, এবং তিনি কখনোই তার মুসলিম পরিচিতি লুকানোর চেষ্টা করেননি। তিনি তার প্রচারণায় সমর্থকদের ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর পক্ষে জনসমর্থন বাড়িয়েছে।
মামদানির এই জয়কে কেবল নিউইয়র্কের নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য এক পরিবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।



















