পাকিস্তানের ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে এক ধর্মীয় সভায় এমন এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন যা মুহূর্তেই দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের ছোড়া ১১টি মিসাইলই নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় এবং পাকিস্তানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—যা তিনি “আল্লাহর পক্ষ থেকে অদৃশ্য সাহায্য” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানী ইসলামাবাদে মহররম মাস উপলক্ষে দেশটির ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নকভি। তিনি বলেন, “ভারত যখন আমাদের উপর মিসাইল হামলা চালিয়েছিল, তখন আল্লাহ আমাদের এমনভাবে রক্ষা করেছেন, যা বৈশ্বিক ইতিহাসে এক অসাধারণ নিদর্শন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভারতের সাধারণ নাগরিকদের উপর কখনোই হামলা করতে চাইনি। কিন্তু আমাদের একটি মিসাইল লক্ষ্যে সঠিকভাবে পৌঁছায়নি। তখন আমাদের মনে ভয় ছিল, সেটি হয়তো জনবহুল এলাকায় গিয়ে আঘাত হানবে। কিন্তু আল্লাহর কৃপায় সেই মিসাইলটি সরাসরি ভারতের সবচেয়ে বড় তেল ডিপোতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। এটি নিঃসন্দেহে অদৃশ্য সাহায্যের জ্বলন্ত প্রমাণ।”
নকভি জানান, ভারতের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান এক চূড়ান্ত সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার নজির রেখেছেন। তিনি বলেন, “সেনাপ্রধান দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন—ভারতের একটি হামলার জবাবে চারগুণ প্রতিশোধ নেওয়া হবে। আর ঠিক সেটাই হয়েছে।”
এ সময় তিনি মহররম মাসে শান্তি ও সংহতির বার্তা ছড়ানোর জন্য ধর্মীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “মহররম শুধু শোকের নয়, এটি একতারও প্রতীক। তাই এই মাসে কোনো ধরনের বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না।”
পাশাপাশি আসন্ন ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, “ফয়সাল মসজিদে বিজয় দিবসের দিন আলেম ও ধর্মীয় নেতারা একত্র হয়ে নামাজ আদায় করবেন এবং জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করবেন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নকভি ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ টেনে আনেন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তার ভাষায়, “বিশ্ব যখন যুদ্ধের মুখে, তখন শাহবাজ শরিফ নেতৃত্ব দিয়েছেন এক ঐতিহাসিক কূটনীতির। যুদ্ধবিরতির আহ্বানে বিশ্ব নেতাদের এক ছাতার নিচে এনে পাকিস্তান দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা শুধু একটি পরমাণু শক্তিই নই, শান্তির অগ্রদূতও।”
মহসিন নকভির এমন মন্তব্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—আসলে পাকিস্তানের ভূমিকাই কি সত্যি ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির মূল চাবিকাঠি?
যদিও পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব মন্তব্যকে “ব্যক্তিগত অভিমত” বলে দাবি করে আসছে, তথাপি মহসিন নকভির অবস্থান এবং তার প্রকাশ্য বক্তৃতা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের চোখে পাকিস্তানের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং সামরিক কৌশলের ইঙ্গিত বহন করছে।