ভারতের সিকিম রাজ্যে টানা ভারী বর্ষণের কারণে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। এর ফলে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর সিকিমের বেশ কয়েকটি জেলায় 'রেড অ্যালার্ট' জারি করেছে। একই সঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে মাঙন, গ্যালশিং এবং সোরেং জেলার জন্য।
তিস্তা নদী হিমালয়ের চিতামু হ্রদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। ফলে উজানে (ভারতের অংশে) নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেবাংলাদেশে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা
বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
অন্যদিকে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগেও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নদনদীর পানি বাড়ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দুইদিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই, সোমেশ্বরী ও মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণামৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে।
সুরমা-কুশিয়ারা ও অন্যান্য নদনদীর পরিস্থিতি
সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানিও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী দুইদিন এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোর পানি আগামী পাঁচ দিন বাড়বে, যদিও তা এখনই বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই।
একইভাবে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার নদ-নদীর পানিও আগামী পাঁচ দিন বাড়তে পারে।
ভারতের সিকিমে পরিস্থিতি
শনিবার (৩১ মে) সিকিগ্যাংটকের জেলা প্রশাসক এক জরুরি ঘোষণায় জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য জানাবে।
মাঙন জেলায় রেড অ্যালার্ট জারির ফলে গ্যাংটকের অন্তর্গত দিকচু থেকে সিংতাম পর্যন্ত তিস্তা নদী অববাহিকায় বন্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখতে এবং প্রস্তুতি জোরদার করতে বলা হয়েছে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের।
সরকারি প্রস্তুতি ও নাগরিকদের করণীয়
বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। জনসাধারণকে নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে সতর্ক থাকতে এবং সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।