close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারত-পাকিস্তানে এক দানবের তাণ্ডব, কেয়ামতের সাথে তুলনা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
A deadly cloudburst has unleashed devastation across India and Pakistan, killing nearly 800 in Pakistan and destroying homes in India, leaving millions terrified.

ভারত ও পাকিস্তানে এক অভিন্ন অদৃশ্য দানব—মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি কেয়ামতের দৃশ্য তৈরি করেছে। পাকিস্তানে প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু, ভারতে ঘরবাড়ি ভেসে গিয়ে আতঙ্কে রাস্তায় নেমেছে মানুষ।

দুই প্রতিবেশী চিরশত্রু দেশ—ভারত ও পাকিস্তান। সীমান্ত উত্তেজনা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা পারমাণবিক শক্তি নয়, এবার তারা মুখোমুখি হয়েছে এক ভয়ংকর অদৃশ্য দানবের। প্রকৃতির এক বিরল রূপ—ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি—তাদের জীবনে নামিয়ে এনেছে কেয়ামতের দৃশ্য। মুহূর্তের মধ্যে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে আসা কালো পানি, পাথর আর কাঁদার স্রোত ভাসিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও মানুষ। আবহাওয়াবিদরা একে পারমাণবিক বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করছেন এর ধ্বংসক্ষমতার কারণে।

গত শুক্রবার থেকে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে বিরল মেঘভাঙ্গা বৃষ্টির আঘাতে পাহাড়ি জেলা গুলোতে ব্যাপক প্লাবন দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ার বনি জেলা। সেখানে মাত্র এক ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ১৫০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি। স্থানীয় প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ওই জেলা থেকেই প্রাণ হারিয়েছেন ২০০ জনের বেশি মানুষ। পাহাড়ি ঢাল থেকে নেমে আসা ভয়ংকর স্রোত মুহূর্তেই গ্রাম মুছে দিয়েছে। স্কুল, মসজিদ, দোকানপাট সবকিছু পানির নিচে চলে গেছে।

গোটা পাকিস্তান জুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছুঁয়েছে প্রায় ৮০০ জনে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। নিখোঁজ রয়েছে আরও শতাধিক। ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ এখন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই জরুরি সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দুর্যোগ পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিপর্যয় হয়ে থাকবে।

পাকিস্তানের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতেও একই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের চামুলি জেলায় শুক্রবার মধ্যরাতে ঘটে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভেসে যায় বাড়িঘর, দোকানপাট ও সড়ক। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। আতঙ্কিত মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে।

এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের চাসতী গ্রামে মেঘবিস্ফোরণ সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৬০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। পাহাড়ি অঞ্চলে হঠাৎ করে আসা এ ধরনের বিপর্যয় স্থানীয় মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

আবহাওয়াবিদরা ব্যাখ্যা করছেন, কোনো ছোট এলাকাজুড়ে এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে তাকে বলা হয় ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি। এটি সাধারণ বৃষ্টির চেয়ে বহুগুণ বেশি ধ্বংসাত্মক। পাহাড়ি এলাকায় এর প্রভাব সবচেয়ে ভয়ংকর হয় কারণ সেখানকার পানি, কাদা আর পাথরের স্রোত মুহূর্তে জনপদ ধ্বংস করে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আরও তীব্র করে তুলছে। অনিয়মিত বর্ষণ, জটিল বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও বন উজাড়ের কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মতো পাহাড়ি অঞ্চলসমৃদ্ধ দেশগুলো ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এমন দুর্যোগ ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে এবং এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বর্তমানে পাকিস্তান ও ভারতের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় হাজারো পরিবার খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে। শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে পানিবাহিত রোগের কারণে। চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, দুর্যোগ-পরবর্তী মহামারি দেখা দিতে পারে যদি দ্রুত ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা না পৌঁছায়।

ভারত ও পাকিস্তান বহুদিন ধরে শত্রুতা বজায় রাখলেও প্রকৃতির সামনে উভয় দেশই সমানভাবে অসহায়। সীমান্তের দুই পাশে একই দানবীয় বিপর্যয় মানবজাতিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে রাজনীতি নয়, দরকার যৌথ উদ্যোগ।

No comments found