উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নীলা মার্কেট ও ওয়েস্টিনে খাবার খাওয়া নিয়ে সাংবাদিক মাসুদ কামাল তীব্র সমালোচনা করেছেন, তুলেছেন বিল ও জনপ্রিয়তা নিয়ে কড়া প্রশ্ন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত জীবনধারা ও আচরণ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলেও চলছে সরব আলোচনা।
ঘটনার শুরু আসিফ মাহমুদের একটি মন্তব্য থেকে। তিনি বলেন, রাতে কাজ শেষ করতে কখনও কখনও ভোর হয়ে যায়, তখন বাসায় খাবার না থাকায় তিনি ৩০০ ফিট এলাকার নীলা মার্কেটে যান হাঁসের মাংস খেতে। কিন্তু যদি ভোর হয়ে যায় এবং মার্কেট বন্ধ থাকে, তখন হোটেল ওয়েস্টিনে গিয়ে খাবার খান। এই বক্তব্যের পরেই মাসুদ কামাল সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন—“ভাই আসিফ মাহমুদ, ওয়েস্টিনে বিলটা কে দেয়? আপনি কি নিজেই দেন, নাকি ফ্রি খান? ক্যাশ অর কাইন্ড—এই ফর্মুলায় ফ্রি খান? আপনাকে কে খাওয়ায়, ভাই?”
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘কথা’-তে প্রকাশিত এক ভিডিওতে মাসুদ কামাল আরও বলেন, “এটাই হলো আমাদের আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাণ্ডকারখানা।” তিনি উল্লেখ করেন, একজন সরকারি উপদেষ্টার এমন অভ্যাস জনগণের কাছে নানা প্রশ্ন তৈরি করতে পারে।
মাসুদ কামাল তার বক্তব্যে আসন্ন নির্বাচনের প্রসঙ্গও টানেন। তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, সামনে তিনি নির্বাচন করবেন এবং যদি করেন, শিডিউল ঘোষণার আগেই পদত্যাগ করবেন। অর্থাৎ, শিডিউলের আগের দিন পর্যন্ত তিনি গুছিয়ে নেবেন, তারপর পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেবেন। করেন ভাই, নির্বাচন করেন।”
তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “আপনার যে ইমেজ তৈরি হয়েছে, আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি—আপনি যদি একা নির্বাচন করেন, অর্থাৎ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে, বিএনপির মার্কা ছাড়া, শুধুমাত্র এনসিপি থেকে নির্বাচন করেন—আমি দেখতে চাই আপনি কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেন! আপনার নীলা মার্কেটের হাঁস খাওয়া আর ওয়েস্টিনে যাওয়া—এই ঘটনা যদি জনগণ শোনে, ভোট পেতে আপনাকে বেগ পেতে হবে।”
এ সময় তিনি আসিফ মাহমুদকে স্মরণ করিয়ে দেন, “আপনি একজন উপদেষ্টা। আপনার বয়স, পরিচিতি বা বন্ধুবান্ধব যাই হোক না কেন, মনে রাখতে হবে—এই দেশের মানুষ আপনাকে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়েছে। সেই পদ ও সম্মান রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মন্তব্য কেবল একটি ব্যক্তিগত অভ্যাসের সমালোচনা নয়, বরং রাজনৈতিক শিষ্টাচার, জনমত এবং নেতার ব্যক্তিগত আচরণের প্রভাব নিয়েও বড় একটি আলোচনার সূচনা করেছে। অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে এমন বিতর্ক রাজনীতির মাঠে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ওয়েস্টিনের বিল কে দেয়, এই প্রশ্নের জবাব এখনও আসিফ মাহমুদের পক্ষ থেকে আসেনি। তবে মাসুদ কামালের এই মন্তব্য ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ একে ব্যক্তিগত জীবনে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন, আবার কেউ এটিকে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্বচ্ছতার দাবি হিসেবে দেখছেন।
সব মিলিয়ে, এই বিতর্ক প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তিগত জীবনযাপন, ব্যয়বহুল অভ্যাস ও জনমতের মধ্যে সম্পর্ক এখনও শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী। সামনে নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনা রাজনীতিকদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে উঠতে পারে।