অভিনয়ের জগতে সাদিয়া আফরিন মাহি এখন এক পরিচিত নাম। নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েব কনটেন্ট কিংবা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি—সব জায়গাতেই তাঁর পদচারণা সমান স্বতঃস্ফূর্ত। অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক বার্তাধর্মী কাজে আগ্রহী মাহি সম্প্রতি নতুন আলোচনায় এসেছেন ‘নারী, তুমি আওয়াজ তোলো’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ছবিটি প্রকাশের পর থেকেই দর্শকদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। মাহির মতে, সমাজে নারীরা বরাবরই নানা প্রতিবন্ধকতা ও অবহেলার শিকার হন, তাই একসময় নিজের অধিকার আদায়ে আওয়াজ তোলা ছাড়া উপায় থাকে না। তিনি বিশ্বাস করেন, এ ধরনের কাজ নারী সমাজকে সচেতন করবে এবং কোথায় কীভাবে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে তা শেখাবে।
মাহির অভিনয়জীবন শুরু ২০১৪ সালে। এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি ভিউ বা জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটে কাজ বেছে নেননি। তাঁর কথায়, “আমি কোটি ভিউয়ের পেছনে দৌড়াই না। আমি চাই, আমার কাজ দেখলে দর্শক একটা বার্তা পাক, একটা অনুভূতি পাক।” তাই তিনি সচরাচর বাণিজ্যিক স্রোতে ভেসে যান না। বরং স্বাধীন নির্মাতাদের ভালো গল্প পেলেই অভিনয়ে রাজি হন। বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ সময় এসব নির্মাতা বড় তারকাদের নিতে পারেন না। তাই প্রস্তাব এলে মাহি তাঁদের হতাশ করেন না।
‘পদ্মাপুরাণ’ চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় এখনো দর্শকের মনে গেঁথে আছে। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে একাধিক বিভাগে। শুধু সিনেমা নয়, নাটকেও সমান জনপ্রিয় তিনি। তাঁর অভিনীত নাটকগুলো আলোচিত হয়েছে, বিজ্ঞাপনচিত্রে ছিলেন দেশের সেরা ব্র্যান্ডগুলোর শুভেচ্ছাদূত। তিনি মনে করেন, প্রতিদিন কাজ করলেই শিল্পী বড় হয় না। বরং গল্পের মানই একজন শিল্পীকে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠিত করে। “আমি চাই না প্রতিদিন শুটিং করে শুধু কাজের ভিড় তৈরি করতে। আমার বিশ্বাস ভাগ্যে—যা হওয়ার তাই হবে। অযথা দৌড়ঝাঁপ করে লাভ নেই,” বলেন মাহি।
শোবিজে মাহি নামের একাধিক তারকা থাকার কারণে প্রায়ই বিভ্রান্তির শিকার হন তিনি। অনেকে তাঁকে সামিরা খান মাহির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন, আবার কেউ কেউ মাহিয়া মাহির সঙ্গেও মিশিয়ে ফেলেন। তবে তিনি এটিকে বিড়ম্বনা নয়, বরং আনন্দের বিষয় হিসেবেই নেন। তাঁর ভাষায়, “মাহি নামের সবাইকেই সফল বলা যায়। এটাই আমার কাছে আনন্দের।
নতুন কাজের পরিকল্পনা নিয়েও ব্যস্ত তিনি। সম্প্রতি নেপালে একটি নাটক, একটি ওয়েব ছবি ও একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির শুটিং শেষ করেছেন। নাটকটির নাম ‘কেয়ার অব সারাংকোট’, যা ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছে। ওয়েব ছবিটি শিগগিরই আসবে দর্শকদের সামনে, আর স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটি আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নেবে। এ ছাড়া আরও একটি বাণিজ্যিক ছবির কথাবার্তা চলছে, যদিও এখনো শুটিং শুরু হয়নি।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যও তিনি নতুন দুটি কাজ শেষ করেছেন, যেগুলো খুব শিগগির মুক্তি পাবে। সব মিলিয়ে এ বছর সাত থেকে আটটি নতুন কাজ নিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি।
নিজেকে আলাদা পথে রাখাই তাঁর মূল দর্শন। তিনি মনে করেন, অভিনয় কেবল কাজের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না; বরং কাজের মান আর বার্তার ওপর নির্ভর করে। তাই তিনি বলেন, “ভাগ্যে যা আছে, তাই হবেই। আমি বিশ্বাস করি, ভালো কাজ করলে সেটাই আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।