ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক ফের ভয়াবহ দিকে মোড় নিচ্ছে। পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের মধ্যেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে ভারতের তরফ থেকে — সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত!
এই সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তানের ভেতরে ক্রমেই বাড়ছে ক্ষোভ ও উদ্বেগ। ইসলামাবাদ কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ভারতের একতরফা এই সিদ্ধান্তকে তারা সরাসরি ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে দেখবে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (NSC) তাদের সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পাকিস্তানি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পেহেলগামে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক হামলার জেরে ভারতীয় সরকার ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ভারতের ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (CCS) এই সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশলগত চাল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই সিন্ধু পানি চুক্তি ছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরল এক শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়ার নিদর্শন। পাকিস্তানের কৃষি ব্যবস্থার প্রায় ৯০ শতাংশই সিন্ধু নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। ফলে ভারতের এই সিদ্ধান্ত দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকে জানানো হয়েছে, ভারতের যদি পানির প্রবাহ থামানোর কোনো প্রকল্প (যেমন জলাধার বা বাঁধ নির্মাণ) হাতে নেয়, তাহলে পাকিস্তান ‘সম্পূর্ণ জাতীয় শক্তি’ ব্যবহার করে সেই স্থাপনা ধ্বংস করবে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এই ‘সম্পূর্ণ শক্তি ব্যবহারের’ মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
পাকিস্তানের এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরও স্পষ্ট করে বলেন, "পানি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি ভারত একতরফাভাবে পানি সরবরাহের পথ রুদ্ধ করে, পাকিস্তান এক মুহূর্ত দেরি করবে না। সামরিকভাবে জবাব দেওয়া হবে—যেখানে প্রয়োজন, সেখানে।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পানি সংকটকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যদি বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে এই সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে, যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখন সময় এসেছে বিশ্বশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের। নইলে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে এমন একটি সংঘাত শুরু হতে পারে, যার পরিণতি শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, গোটা বিশ্বের জন্য মারাত্মক বিপদ বয়ে আনবে।