close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বগুড়ায় সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা, আজকের দিনে শহীদ ১০৫ জন ছাত্র জনতা ..

শমসের নূর খোকন avatar   
শমসের নূর খোকন
****
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত দিনক্ষণটি ছিল ৪ঠা আগস্ট ২০২৪ রবিবার। ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক দফার দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এসেছিল গত বছরের আজকের এই দিনে। অন্যদিকে এই একই দিনে আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে শক্ত হাতে দমনের নির্দেশ দিয়েছিল পলাতক শেখ হাসিনা। এই দিনে দ্বিতীয়বার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আজকের দিনে শহীদ হয়েছেন ১০৫ জন ছাত্র জনতা। বগুড়াতে আ'লীগ সন্ত্রাসীদে পরিকল্পিত হত্যার কবলে পড়েছিলেন দৈনিক উত্তর কোণের সিনিয়র সাংবাদিক শমসের নূর খোকন। উল্লেখ্য যে, তিনি আন্দোলনের শুরু থেকেই বগুড়া শহর ও এর আশপাশের এলাকায় সর্বক্ষণ অন্বেষণ করছিলেন। দিন শেষে ঘটনার উপর ভিত্তি করে রিপোর্ট তৈরি করে বগুড়ার প্রভাবশালী দৈনিক উত্তর কোণ এবং সহ-যোদ্ধাদের কাছে সংবাদ প্রেরণ করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। রিপোর্টার খোকন ছোটবেলা থেকেই শারীরিক অসুস্থ, কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তার যে দক্ষতা ও সাহসীকতা সে এক অকল্পনীয়। সাংবাদিক শমসের নূর খোকন সত্যিকারে একজন পরীক্ষিত নির্ভীক সাংবাদিক এতে কোন সন্দেহ নেই । তিনি কখনো কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। সাংবাদিক খোকনের দৃষ্টিকোণে পলাতক হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশ ও জাতির সাথে সীমাহীন অন্যায় করেছেন, ফলে এই সাংবাদিকের রিপোর্টে সহজে স্বৈরাচার হাসিনার পক্ষে পজেটিভ সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এজন্যই এই রিপোর্টকে আ'লীগ ঘরনার ছদ্মবেশী শত্রু সাংবাদিক নামধারীরা কোনক্রমে মেনে নিতে পারছিলনা। ১৮ই জুলাই এর কিছু ঘটনা তুলে ধরে সাংবাদিক বলেন, ১৮ই জুলাই পলাতক হাসিনা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল। এদিনে বগুড়া শহর যেন বারুদের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল ১০টায় পুলিশ বাহিনীকে বগুড়ার সাতমাথায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে হাজার হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য প্রতিটা রাস্তার প্রবেশদ্বারে মারমুখি অবস্থানে ছিল। একসময় পুলিশ ও ছাত্র জনতার মধ্য তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। এই সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক খোকন গোহাইন রোডের পৌর পার্ক গেট সংলগ্নে দাঁড়িয়ে অন্বেষণ করছিলেন। পুলিশের ছোড়া মুহুমুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট আর গুলি বর্ষণে এলাকাটি প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। অন্যদিকে ছাত্র জনতার ইট পাটকেল নিক্ষেপের ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাতমাথা ও এর পাশের এলাকা। এমনতা অবস্থায় সাংবাদিক খোকনের সামনে একটি টিয়ারশেল এসে পরে, এসময় তিনি চোখ বন্ধ করে অসুস্থ বোধ মনে করে বসে পড়েন। এমন দৃশ্য দেখে দৌড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে খোকনকে ধরে জিজ্ঞেস করে বলেন, আঙ্কেল ঠিক আছেন তো? আপনি কেন এসেছেন? এরপর শিক্ষার্থীরা একটি রিক্সা যোগে খোকনকে শহরের সুত্রাপুরের বাসার দিকে পাঠিয়ে দেন। সেদিন থেকে ক্রমাগত ভাবে পুলিশ সীমা লংঘন করতে থাকে। যোহরের আগ মুহূর্ত থেকে পুলিশ বগুড়া শহরের রিয়াজ কাজী লেন সুত্রাপুর, কানছগাড়ি, সেউজগাড়ী, জলশ্বরিতলা  সহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ঢুকে বৃষ্টির মত টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে, এতে করে টিয়ারসেলের ঝাঁঝালো ধোয়া বাসা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে, ফলে শত শত নারী শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এভাবেই পুলিশ ৩রা আগস্ট পর্যন্ত বগুড়া শহর ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের তান্ডব চালিয়েছে। তবে ফিরে দেখা ৪ঠা আগস্ট দিনটি ছিল অতি ভয়ংকর। কারণ, এই দিন পলাতক শেখ হাসিনা জনগণকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে কঠোর হস্তে দমনের নির্দেশ দিয়েছিল। প্রতিটি উপজেলা থেকে আ'লীগের সন্ত্রাসীদের বগুড়া শহরে নিয়ে আসা হয়েছিল। সাংবাদিক খোকন বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় আজকে দিনেও শহরের বিভিন্ন এলাকার পায়ে হেটে অন্বেষণ করছিল। এরপর তিনি শেরপুর রোড হয়ে আনুমানিক বেলা ১১টায় বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা সংলগ্ন সাংবাদিক ছাউনি পার হয়ে বগুড়া জেলা স্কুলের গেটের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন সাতমাথার মাঝ পয়েন্টে ট্রাফিক বক্স এলাকার জনশূন্য থাকলেও সাতমাথার প্রবেশ মুখ গোহাইল রোড, স্টেশন রোডে হাজার হাজার ছাত্র জনতা মারমুখী অবস্থান করছিল। অন্যদিকে টেম্পু রোড, মেরিনা রোড, আ'লীগ অফিস ও মুক্তমঞ্চের সামনে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা লাঠি সোটা, হটিস্টিক, রামদা, লোহার রড হাতে নিয়ে মারমুখী অবস্থান করছিল। তাদের সাথে কয়েকজন আ'লীগ ঘরণার সাংবাদিক সহ পুলিশের কিছু সদস্যকে সন্ত্রাসীদের সাথে মিশে থাকতে দেখাগেছে বলে সাহসী এই কলম সৈনিক জানায়। অন্যদিকে সাতমাথার পূর্বে বগুড়া জেলা স্কুল গেট সংলগ্নে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিজিবি সদস্যবৃন্দ অর্থাৎ বাংলাদেশ রাইফেলর্স (বিডিআর)। এসময় খোকন জেলা স্কুল গেটের সামনে দিয়ে রানার প্লাজা অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে আ'লীগ অফিসের দিক থেকে প্রায় ৪০/৫০ জন আ'লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ধর ধর বলে তেরে আসে সাংবাদিক খোকনকে হত্যার উদ্দেশ্যে! এসময় সাংবাদিক খোকনের কয়েক গজ সামনেই ছিল বিজিবি অথাৎ বাংলাদেশ রাইফেলর্স (বিডিআর)। আ'লীগ সন্ত্রাসীদের তেরে আসা দেখে সাহসী বাহিনী বিডিআর দ্রুত সামনে এগিয়ে এসেই সাংবাদিক খোকনকে তাদের পিছনে পার করে দেন। এরপর তেরে আসা আ'লীগের সন্ত্রাসীদের বিডিআর বলতে থাকেন, এই তোমরা ওদিকে যাও এদিকে আসার চেষ্ট করোনা। বিডিআরের একথা শুনে একটা টু শব্দ না করে আ'লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ফিরে চলে যায়। এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন দৈনিক উত্তর কোণে'র সাংবাদিক শমসের নূর খোকন। তিনি বলেন, আজকের এই দিনে বাংলাদেশ রাইফেলর্স (বিডিআর) ঢাল হয়ে যদি তার সামনে না দাঁড়াতেন, আ'লীগের সন্ত্রাসীরা তার এক টুকরো হাড়  মাংশের চিহ্ন রাখতোনা। খোকন বলেন, রাখে আল্লা মারে কে? বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, সাংবাদিক খোকনকে হত্যার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিল সারিয়াকান্দি থেকে আসা আ'লীগের কিছু সন্ত্রাসী ও বগুড়ার আ'লীগ ঘরনার চিহ্নিত কয়েকজন সাংবাদিক। উত্তর কোণের রিপোর্টার বাংলাদেশ রাইফেলর্স (বিডিআর) এর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই বাহিনীর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকা পিলখানা থেকে শুরু করে যে প্রান্তেই হোক, কয়েক যুগধরে যেন ছায়ার মত আগলে রেখেছেন। সাংবাদিক খোকন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশ রাইফেলর্স (বিডিআর) কে কাগজ কলমে আগের নামেই ফিরে নিয়ে আসা হোক। ফিরে দেখা গত বছরে আজকের দিনে সন্ধ্যা পর্যন্ত খবর নিয়ে জানা গিয়েছিল, বগুড়ায় ৫ জন সহ সারাদেশে ১০৫ জন ছাত্র জনতাকে শহীদ করা হয়েছে। এই দিনে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টে আজকের দিনে সারাদেশে শতাধিক সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। ২০২৪ এর আজকের এই ৪ঠা আগস্ট ছিল আ'লীগের মরণ কামড়ের দিন। প্রায় ২ হাজার মানুষ হত্যা করে বিশ্ব স্বৈরাচার খুনি হাসিনা তার একটি অংশকে নিয়ে পালিয়েছে। হাসিনা পালালেও তার অধিকাংশ দোষর এদেশে রয়েই গেছে। সকল খুনি ও হত্যা পরিকল্পনা কারীদের বিচার হোক এটাই জাতির প্রত্যাশা। 
Không có bình luận nào được tìm thấy