ফরহাদ মজহার মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ সংগ্রাম ছাড়া এ দেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান সম্ভব হতো না।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনায় প্রখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, এ আন্দোলনের পেছনে মূল শক্তি হিসেবে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর মতে, খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও অবিচল অবস্থান না থাকলে জনগণের এই জাগরণ কখনোই সম্ভব হতো না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সবসময়ই উল্লেখ করে আসছেন যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফরহাদ মজহার এ প্রসঙ্গেই বলেন, “আজ যে গণঅভ্যুত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা কোনো একদিনে তৈরি হয়নি। খালেদা জিয়ার অনমনীয় সংগ্রাম, জেল-জুলুম সহ্য করা এবং মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর নিরলস লড়াই—এসব মিলেই আজকের আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।”
তিনি মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেতা নন, বরং এ দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সাম্প্রতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই প্রমাণ করেছে যে, তাঁর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল এখন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।
এসময় ফরহাদ মজহার সমালোচনাও করেছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর স্বেচ্ছাচারী নীতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “যখন রাষ্ট্র একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হয়, তখন জনগণ আর নীরব থাকতে পারে না। খালেদা জিয়া সেই অন্ধকার সময়ে মানুষের সাহস যুগিয়েছেন, যা শেষ পর্যন্ত আজকের গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে।”
রাজনৈতিক মহলে ফরহাদ মজহারের এই মন্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যজনিত কারণে তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় না থাকলেও তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং সংগ্রামী চেতনা জনগণের মধ্যে বেঁচে আছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মও আজ তাঁর সংগ্রামের ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন করে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে।
একইসাথে তিনি সতর্ক করেছেন ভবিষ্যৎ রাজনীতির জটিলতা সম্পর্কে। তাঁর মতে, গণঅভ্যুত্থান কেবল শুরু মাত্র, সামনে গণতন্ত্র রক্ষার পথ আরও কঠিন হতে পারে। তবে জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং খালেদা জিয়ার দেখানো সংগ্রামের ধারা বজায় রাখে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে, গণঅভ্যুত্থান কোনো একক ব্যক্তির কারণে সফল হয়নি, বরং জনগণের সম্মিলিত চেষ্টাতেই তা বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে ফরহাদ মজহারের মতে, সেই সম্মিলিত শক্তিকে সংগঠিত ও দিকনির্দেশনা দিতে একজন নেতার প্রয়োজন হয়—আর খালেদা জিয়া সেই নেতৃত্বের নাম।
তিনি আরো বলেন, “আজকে যদি আমরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে চাই, ভোটাধিকার ফেরত চাই, আইনের শাসন চাই—তাহলে আমাদের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। এই সংগ্রাম শুরু হয়েছিল খালেদা জিয়ার হাত ধরে, এবং তা-ই আমাদের আজকের গণঅভ্যুত্থানকে সম্ভব করেছে।”
এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরা বলছেন, জনগণের আন্দোলনে এককভাবে কোনো ব্যক্তিকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে বিরোধীদল ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ইতিহাসের পৃষ্ঠায় খালেদা জিয়ার সংগ্রাম চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
ফরহাদ মজহারের এই মন্তব্য প্রমাণ করেছে যে, খালেদা জিয়া এখনও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং জনগণের হৃদয়ে তিনি সংগ্রামের প্রতীক হয়ে বেঁচে আছেন।