close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বে'প'রো'য়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সং ঘা তে ছয় মাসে নি হ ত ৪৩..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
According to human rights data, internal conflicts within BNP and its affiliates have led to at least 43 deaths in six months. Is the party gradually losing control?

এক মানবাধিকার সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ গেছে অন্তত ৪৩ জনের। প্রশ্ন উঠেছে—দল কি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে?

 

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় এক ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে। একটি মানবাধিকার সংস্থার তথ্যানুসারে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন দলীয় কোন্দলে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, বিএনপির ভেতরে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে, আর দলটি এর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।

এই বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনায়, পুরনো ঢাকার মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী ও যুবদলের সাবেক কর্মী লাল চাঁদ সোহাগকে পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা করা হয়। ৯ জুলাই প্রকাশ্যে সংঘটিত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। হত্যার কারণ হিসেবে চাঁদা না দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও পুলিশ বলছে, পুরনো শত্রুতা এবং বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এর মূল কারণ।

ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে, এ হত্যাকাণ্ডে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা জড়িত। এ ঘটনায় পাঁচজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে—এদের মধ্যে রয়েছেন যুবদলের সাবেক সহ-সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি। এছাড়াও ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা সরাসরি সম্পৃক্ত।

এ পর্যন্ত এই মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন, এবং দু’জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা আসকের তথ্যমতে, সারা দেশে রাজনৈতিক সংঘাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৫ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ২,৭৭০ জন এবং সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ২৭০টিরও বেশি। এই সংঘর্ষগুলোর এককভাবে সবচেয়ে বেশি দায় বর্তায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ওপর। আর সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো—এই সহিংসতার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৬ জন নিজেরাই বিএনপির কর্মী।

বিএনপি দাবি করেছে, সংঘর্ষ থামাতে তারা কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। দলের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত ৩২০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮০০ জন বিএনপির, ছাত্রদলের ৪০০, স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৫০ এবং যুবদলের শতাধিক নেতা-কর্মী। তবে এসব ব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগ ও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা।

তারা বলেন, “বহিষ্কার করলেও অনেকেই দলীয় কর্মকাণ্ডে আবার ফিরে আসছে। এমনকি অনেকের বহিষ্কার আদেশ গোপনে প্রত্যাহারও করা হয়েছে।”

এই অবস্থার জন্য সরকারকেও দায়ী করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘পুরান ঢাকার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে যাকে দেখা যাচ্ছে, তাকে কেন এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি? এতে কি সরকারের প্রশ্রয় রয়েছে না?’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. রেজাউল করিমের মতে, “শুধু বহিষ্কার করে দায় শেষ হয় না, দলীয় সংস্কৃতি এমন হতে হবে যাতে অপরাধে জড়ানোর সাহস না পায় কেউ।” অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক সহনশীলতা এবং দলীয় কাঠামোয় স্বচ্ছতা জরুরি।

খুলনায় যুবদল নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমানকে বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, যা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের নতুন দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, রাজধানীর পল্লবীতে চাঁদা না পেয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে গুলি ও হামলা চালানো হয়েছে, যেটি পুলিশ নিজেই স্বীকার করেছে।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (HRSS) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট ৪৬৮ জন বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ২৫৯ জন নিহত, এবং নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০৪২ জন, যার মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৭৬ জন নারী ও শিশু।

পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেছেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।” তবে পুলিশের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হয়েছে, সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

No se encontraron comentarios