close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশের জিম সংস্কৃতির নৈতিকতা: ফিটনেস নাকি ফিতনা?

Sumon Hawlader avatar   
Sumon Hawlader
বাংলাদেশে জিম সংস্কৃতির বিবর্তন: স্বাস্থ্য সচেতনতা নাকি নৈতিক সংকটের উত্থান?..

সুমন হাওলাদারঃ


বাংলাদেশে জিম সংস্কৃতি বা শরীরচর্চার কেন্দ্রগুলো এক সময় স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। শরীর সুস্থ রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তোলার জন্য জিমের ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষত নগর এলাকাগুলোর গলিঘুঁজিতে জিম সংস্কৃতির মধ্যে কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

জিম সংস্কৃতির বর্তমান বাস্তবতা

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জিম সেন্টারে বিবাহিত ও অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসাথে শরীরচর্চা করছেন। এই মেলামেশার মধ্যে অনেক সময় অনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয়। কিছু নারী-পুরুষের জন্য শরীরচর্চার উপকরণগুলোর চেয়ে সহসদস্যদের শারীরিক আকর্ষণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফলস্বরূপ, অনেক পরিবারে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ তৈরি হচ্ছে।

আইনি ও সংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(২) ধারায় লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, আইনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ একসাথে জিম করা বৈধ। তবে, জিম পরিচালনার জন্য ব্যবসায়িক লাইসেন্স প্রয়োজন হলেও পোশাক বা আচরণবিধি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ফলে এই বৈধতার সুযোগে অনেক সময় অনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

 ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম ধর্মে এমন পরিবেশকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে যেখানে অশ্লীল পোশাকে বিপরীত লিঙ্গের মেলামেশা হয়। ইসলামিক আলেমরা এই ধরনের জিমকে 'ফিতনা সেন্টার' বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, এই পরিবেশে নৈতিকতার অবনতি ঘটে এবং এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

সামাজিক প্রভাব ও বিশ্লেষণ

জিম সংস্কৃতির এই অন্ধকার দিক সমাজে এক নতুন ধরনের সংকট সৃষ্টি করছে। বডি ফিটনেসের নামে বিবেকের স্খলন ঘটছে। আজকের জিম শুধু পেশী গঠন করছে না, বরং এটি পরকীয়া সম্পর্কের সূচনা করছে, পরিবার ভাঙছে এবং এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করছে যাদের শরীর চকচকে হলেও চরিত্রের উন্নতি হচ্ছে না।

ভবিষ্যৎ প্রভাব ও সমাধান

এখনই সময় এসেছে ভাবার—এই জিম সেন্টারগুলো কি স্বাস্থ্য গড়ার জন্য নির্মিত, নাকি তা নৈতিকতার ক্ষয় সাধন করছে? সমাজের প্রত্যেক স্তরে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন। আইন ও সংবিধানের পাশাপাশি সামাজিক নীতিমালার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। না হলে, বাংলাদেশের ফিটনেস উন্নতি হতে পারে, কিন্তু নৈতিকতার উন্নতি নিশ্চিত করা কঠিন।

উপসংহারে বলা যায়, জিম সংস্কৃতির এই পরিবর্তন শুধু ব্যক্তিগত নয়, সমাজের সার্বিক কল্যাণের উপরও প্রভাব ফেলছে। তাই, এক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নৈতিকতার পুনরুদ্ধার জরুরি।

Nessun commento trovato