খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৭ লাখ টন গম আমদানির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। পাঁচ বছর ধরে চলবে এই বাণিজ্যিক সহযোগিতা।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হলো এক দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যার আওতায় আগামী পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি বছর ৭ লাখ টন গম আমদানি করবে বাংলাদেশ।
এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় রবিবার (২০ জুলাই) ঢাকার সচিবালয়ে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এই চুক্তিতে সই করেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ কে সওয়ার।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে গড়ে ৭ লাখ টন উচ্চমানের গম সরবরাহ করা হবে প্রতিযোগিতামূলক দামে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মানুষের পুষ্টিমান ধরে রাখা এবং খাদ্য সরবরাহে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, "এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হলো। এর ফলে দুই দেশই লাভবান হবে এবং জনগণের উপকার নিশ্চিত হবে।"
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। তিনি এ চুক্তিকে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে অভিহিত করেন।
খাদ্য নিরাপত্তা একটি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক অগ্রাধিকার। বৈশ্বিক অস্থিরতা, যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য আমদানিতে অনেক দেশেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল ও নিরবচ্ছিন্ন গম সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়া এই চুক্তি শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককেও আরও গভীর করবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ভবিষ্যতে খাদ্য সামগ্রী ছাড়াও অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে যৌথ উদ্যোগ ও চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হলো এই উদ্যোগের মাধ্যমে।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই গমগুলো প্রধানত সরকারি খাদ্য মজুদ, গণখাদ্য বিতরণ এবং প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ব্যবহৃত হবে, যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীও এর সুফল পায়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, এই দীর্ঘমেয়াদি গম আমদানির চুক্তি শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, বরং বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।