ঢাকায় বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা, বিনিয়োগ, কৃষি এবং জনগণের চলাচল সহজীকরণে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। রবিবার সকালে ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, আর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন সফররত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
বৈঠক শুরু হয় সকাল পৌনে ১০টার দিকে। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দীর্ঘ বৈঠক শেষে জানানো হয়, দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছেছে এবং ভবিষ্যতে সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করার ব্যাপারে একমত হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের মধ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। বিশেষ করে ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা আগামী দিনে দুই দেশের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তিনি আরও জানান, জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ এবং চলাচল সহজ করার বিষয়েও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই চুক্তি ও সমঝোতা আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। ভবিষ্যতে আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে বদ্ধপরিকর। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন এবং বলেন, পাকিস্তান সবসময়ই এশিয়ার শান্তি ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কৃষি প্রযুক্তি বিনিময়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম জোরদার করা এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দুই দেশই মনে করছে, এ ধরনের উদ্যোগ শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্কই নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকেও শক্তিশালী করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিনের নানা অচলাবস্থার পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। বৈঠকে যে চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে তা দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সমঝোতা এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং তা দুই দেশের জনগণের জীবনে কতটা বাস্তব সুফল বয়ে আনে। তবে আপাতত এতটুকু নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হলো এই বৈঠক ও স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে।