বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে সুইস বিনিয়োগকারী আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ। ৩৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ফেরত চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ হোল্ডিংস এজি। প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৮ সালের একটি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের বিনিয়োগ যথাযথভাবে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান শেয়ারধারী, যা পূর্বে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড (ওবিএল) নামে পরিচিত ছিল। ৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বরাবর পাঠানো একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং স্পষ্টভাবে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দেয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক, ওবিএল এবং আইসিবি গ্রুপের মধ্যে একটি 'শেয়ার বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার আওতায় আইসিবিকে ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে বলা হয় এবং নিশ্চিত করা হয় যে এসব শেয়ারের বিরুদ্ধে কোনো দাবি বা দায় থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে, পূর্ববর্তী শেয়ারহোল্ডারদের দায়ের করা একাধিক মামলা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির অভাবে তারা এখনও সম্পূর্ণ মালিকানা গ্রহণ করতে পারেনি।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে, যার একটি ২০১৪ সালের হাইকোর্টের রায়—যাতে বলা হয়েছে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আইসিবি গ্রুপ তাদের শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবে না। ফলে ব্যাংকের মালিকানা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
আইসিবি চেয়ারম্যান জোসেফিন শিভারেত্নামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এসব আইনি জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনীয় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং তারা সম্প্রতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
এছাড়া, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটিও অনুমোদন করেনি। ফলে, পুরো ব্যবস্থাপনাতেই স্থবিরতা বিরাজ করছে।
আইসিবি গ্রুপ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, যদি ভবিষ্যতে আদালত পূর্বতন শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে রায় দেয়, তবে তারা আবার ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে, যা আইসিবির জন্য চরম আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে।
সবশেষে চিঠিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানানো হয়েছে—যদি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয় এবং বিনিয়োগ সুরক্ষায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখা যায়, তবে আইসিবি গ্রুপ ২০০৮ সালের চুক্তিকে বাতিল বলে গণ্য করবে এবং তাদের সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ফেরত চাইবে। ব্যর্থ হলে, তারা আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে।
এই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে দেশের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদের কাছেও।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এই চিঠি সম্পর্কে তিনি অবগত নন এবং এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।