close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বাবার বিদায়, ছাত্রদলের রাজনীতি আর এক যন্ত্রণাময় সকাল: ছাএদল নেতা বাবু..

Shazzadul Alam Khan  avatar   
Shazzadul Alam Khan
মাহমুদুল হাসান বাবু, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের একজন নেতা। ২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয় দুটি বিস্ফোরক মামলা।..

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি-এক মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনে শোকের ছায়া। ওইদিনই চিরবিদায় নেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য এক পিতা, আর তাঁর সন্তান তখন ছিলেন রাজনৈতিক মামলার আসামি।

মাহমুদুল হাসান বাবু, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের একজন নেতা। ২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয় দুটি বিস্ফোরক মামলা। তখন তিনি ছিলেন এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তাঁকে হতে হয় গৃহহীন। প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে বাস করতেন তিনি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসায় এসে যখন খাওয়ার সময় পেতেন, তখন তাঁর বাবা দোকানে বসে পাহারা দিতেন-পুলিশ যেন হঠাৎ বাসায় হানা না দেয়।
“আমি খেয়ে বেরিয়ে গেলে, তখনই বাবা বাসায় ফিরতেন,” স্মৃতিচারণ করেন বাবু।

বাসার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কারণে পুলিশের উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। একবার ভুল করে এলাকারই আরেকজন ‘বাবু’কে সিএনজি পাম্প থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে যাচাই-বাছাই করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

“এলাকায় একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল-আমাকে নিয়ে সবাই চিন্তিত ছিল, কখন কোনো সময় ধরে নিয়ে যায়,” বলছিলেন বাবু।

বাবু তখন ভালুকা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তাঁর নামে মামলা হয়। আর মাত্র এক মাসের মাথায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘটে সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা।

সেই দিন সকালে বাবু ছিল একটি ফিশারির টং ঘরে। বাসায় ফিরে খাওয়ার পরপরই পুলিশ হানা দেয়। তিনি বিকল্প পথ ধরে পালিয়ে যান। কিন্তু এই দৃশ্য দেখে বাবা হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সন্ধ্যায় মায়ের ফোন আসে-“তোর বাবা অসুস্থ, বাসায় আয়।” অপরাধ না করেও অপরাধীর মতো জীবন যাপন করা বাবু তখন মা-বাবা দু’জনকে রেখে বাইরে থাকতেন আত্মগোপনে। বাসায় এসে দেখেন, বাবা একেবারে দুর্বল হয়ে গেছেন। মা ওষুধ আনতে গেলে, বাবু তখন বাবার চোখে চোখ রেখে ছিলেন।

“একটা সন্তান হিসেবে কতটা ব্যর্থ হলে বাবার জন্য ঔষধ আনতেও বাইরে যেতে পারি না,” বলছিলেন বাবু, চোখে পানি ধরে রাখতে না পেরে।

ভালুকা সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা ময়মনসিংহে রেফার করেন-বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। পুরোনো একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দেন ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভাগ্য আর সঙ্গ দেয়নি।

মাঝপথেই বাবাকে হারান বাবু। "আমার বাবাকে হারানোর সেই মুহূর্তটা আমার মনে আজও গেঁথে আছে। বাবা আমাকে কিছু কথা বলেছিলেন, যা আমি আজও কাউকে বলতে পারিনি।"

একজন সন্তান, যার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ছিল, পুলিশি হয়রানিতে পরিবার ছিল বিপর্যস্ত, সেই পরিবারের কর্তা মারা গেলেন ছেলের নিরাপত্তাহীন জীবনের বোঝা কাঁধে নিয়েই।

“বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার সেই ব্যর্থ সন্তান, যে তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি, যার রাজনীতির যন্ত্রণা তুমি বয়ে নিলে, আজও আমি নিজের ভেতরে ক্ষমা খুঁজে পাই না।”

No comments found