close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বড় পরিসরে ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া শুরু করতে যাচ্ছে ইরান

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Iran launches its massive two-day “Sustainable Power 1404” missile drill in the Oman Sea and northern Indian Ocean, showcasing warships, aircraft units, cruise missiles, and drones.

ইরান শুরু করছে দুই দিনব্যাপী ‘সাসটেইনেবল পাওয়ার ১৪০৪’ ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া, যেখানে জাহাজ, বিমান ইউনিট, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে মহড়া।

ইরান আবারও বিশ্ব দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তাদের সামরিক শক্তির প্রদর্শনের মাধ্যমে। ওমান সাগর এবং উত্তর ভারত মহাসাগরে শুরু হতে যাচ্ছে দেশটির সর্ববৃহৎ ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া। ইরানের নৌবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, বৃহস্পতিবার ২১ আগস্ট থেকে শুরু হবে দুই দিনব্যাপী এই মহড়া, যার নাম দেওয়া হয়েছে “সাসটেইনেবল পাওয়ার ১৪০৪”

মেহের নামের ইরানের আধা-সরকারি বার্তাসংস্থার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই মহড়ার মাধ্যমে ইরান শুধু তাদের সামরিক সক্ষমতাই প্রদর্শন করবে না, বরং কৌশলগত দিক থেকে বৈশ্বিক শক্তিগুলোকেও একটি বার্তা দেবে। উত্তর ভারত মহাসাগর এবং ওমান সাগরের বিশাল জলসীমায় মহড়াটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবে বিভিন্ন ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ জাহাজ, যুদ্ধবিমান, উপকূলীয় ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট, সমুদ্র-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং আধুনিক ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ইউনিট।

ইরানের নৌবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্বাস হাসানী বলেছেন, এই মহড়াটি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রযুক্তি এবং দক্ষতার ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হবে। তিনি আরও বলেন, মহড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধ প্রস্তুতি বৃদ্ধি, জনসাধারণের আস্থা জোরদার, অপারেশনাল পরিকল্পনার দক্ষতা উন্নয়ন, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি জাতীয় প্রতিরোধ শক্তিকে আরও শক্তিশালী করা।

অ্যাডমিরাল হাসানী স্পষ্ট করে জানান, এই মহড়ায় ব্যবহার করা হবে বিভিন্ন পরিসরের নির্ভুল ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার এবং যেকোনো ভূপৃষ্ঠের জাহাজকে লক্ষ্য করে ধ্বংস করতে সক্ষম। এর পাশাপাশি ড্রোন অভিযানেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে গোয়েন্দাগিরি ও হামলার দক্ষতা উভয়ই প্রদর্শন করবে।

আন্তর্জাতিক মহল ইতিমধ্যেই এই মহড়ার দিকে নজর রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই মহড়া মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশে একটি স্পষ্ট বার্তা। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, বিশেষ করে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে। ইরান এই মহড়ার মাধ্যমে দেখাতে চাইছে যে তারা শুধু প্রতিরক্ষায় প্রস্তুত নয়, বরং যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে সক্ষম।

ওমান সাগর ও উত্তর ভারত মহাসাগরের অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্যও একটি প্রধান রুট। এ কারণেই ইরানের এই মহড়া বৈশ্বিক পর্যায়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে।

ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে, তাদের সামরিক মহড়াগুলো কেবল প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে, আক্রমণের জন্য নয়। তবে পশ্চিমা দেশগুলো প্রায়ই এসব মহড়াকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ইরান এর মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন করে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

তবে ইরানের ভেতরে ভিন্ন একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। দেশটির সাধারণ জনগণ এবং সামরিক মহলের মতে, এ ধরনের মহড়া জাতীয় আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং জনগণকে আশ্বস্ত করে যে, দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। বিশেষ করে এমন এক সময়, যখন মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে ইরান ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তাদের ড্রোন সক্ষমতাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফলে এই মহড়া শুধু সামরিক প্রদর্শনী নয়, বরং বৈশ্বিক শক্তির কাছে ইরানের অবস্থান জানান দেওয়ার একটি কৌশলগত উদ্যোগ।

সব মিলিয়ে, ‘সাসটেইনেবল পাওয়ার ১৪০৪’ মহড়া ইরানের সামরিক শক্তির আরেকটি বড় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি কেবল দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রদর্শন করবে না, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইরানের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।

No comments found