সিলেটের সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডিসি মো. সারওয়ার আলম সতর্ক করেছেন, সীমান্ত থেকে আর একটি পাথরও সরানো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র খুব দ্রুতই আগের সৌন্দর্যে ফিরবে।
সিলেট জেলায় অবৈধভাবে পাথর লুটের বিরুদ্ধে এবার কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে কোথাও আর একটি পাথরও যদি সরানো হয়, তবে অপরাধীদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দেওয়া হবে এবং যেখানেই তারা অবস্থান করুক, সেখান থেকেই ধরে আনা হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, “পাথরখেকোরা মনে রাখুক, সীমান্তে অবৈধভাবে আর কোনো পাথর তোলা যাবে না। সাদাপাথরের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করবে।
সিলেটের পর্যটন শিল্পে সাদাপাথর একটি অনন্য নাম। তবে গত কয়েক মাস ধরে এ এলাকায় ভয়াবহভাবে পাথর লুটপাট হয়েছে, যার ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশ–বিদেশে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিসি সারওয়ার আলম আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “খুব শিগগিরই সাদাপাথর আগের সৌন্দর্যে ফিরবে। লুণ্ঠিত পাথর খুঁজে বের করে পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে লুটকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের তিন দিকের কাজ চলছে—প্রথমত, লুণ্ঠিত পাথর পুনঃস্থাপন; দ্বিতীয়ত, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা; এবং তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
ডিসি জানান, সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ পাথর পাচার বা লুট ঠেকাতে প্রশাসন ইতোমধ্যেই কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি কেউ মনে করে প্রশাসন চোখ বুজে থাকবে, তবে তারা ভুল করবে। সীমান্ত থেকে কোনোভাবেই পাথর বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য অপরাধ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা।”
সকালে সিলেট জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মো. সারওয়ার আলম। দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। পরে বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান।
সদ্য দায়িত্ব পাওয়া এ কর্মকর্তা এর আগে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সংযুক্ত) হিসেবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাবেক ডিসি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সম্প্রতি আলোচিত সাদাপাথর লুটপাট ইস্যুর পর ওএসডি হওয়ার পরই তার স্থলাভিষিক্ত হন সারওয়ার আলম।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে সিলেটের কোয়ারি, সংরক্ষিত এলাকা ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পাথর ও বালু লুট শুরু হয়। বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথরে গণলুটের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সাবেক ডিসি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে দ্রুত সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটেই দায়িত্ব নিয়েছেন মো. সারওয়ার আলম। তিনি দায়িত্বের প্রথম দিনেই কঠোর অবস্থান নিয়ে স্থানীয়দের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের কড়া নজরদারি, আইন প্রয়োগ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপে সাদাপাথরের পর্যটনকেন্দ্র আবারও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে নিরাপদ ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।