জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, বিএনপির রাজনীতি এখন শুধুই চাঁদা উত্তোলন আর ভণ্ডামিতে পরিণত হয়েছে। খুলনায় এক পথসভায় তিনি দলটির উদ্দেশে তীব্র সমালোচনা করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক পথসভায় বিএনপিকে উদ্দেশ করে তীব্র ভাষায় প্রশ্ন ছুড়ে দেন— “আপনারা কি শুধু চাঁদা তোলার জন্য রাজনীতি করেন?” শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে আয়োজিত এনসিপির পথসভায় তিনি এসব বলেন।
এ সময় হাসনাত বলেন, “আমরা একটা সংকটপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। দেশের রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের প্রয়োজন। অথচ বিএনপি এখন সংস্কার নয়, বিচার নয়— বরং চাঁদাবাজির রাজনীতি করছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাতেও তারা আগ্রহী নয়। তাহলে আপনারা আদতে চান কী? শুধু চাঁদা? যদি চাঁদাই চান, আমরা একত্রে তুলে দিতে পারি। তবে দেশের ভবিষ্যত এভাবে নষ্ট হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “টিভি, সিনেমা, সংবাদপত্র— সর্বত্র দেখা যায় লগি-বৈঠার ইতিহাস। এই সহিংস রাজনীতির শুরু যেখান থেকে হয়েছিল, আজ সেটা বহন করছে মুজিববাদের তথাকথিত ঠিকাদারেরা। বিএনপির মধ্যে কিছু নেতা এসব বাণিজ্যিক রাজনীতিকে পুঁজি করে দলে ঢুকেছে। ফলে বিএনপি আজ সাধারণ কর্মীদের জন্য নয়, বরং সুবিধাভোগী, প্রতারকদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।”
রুমিন ফারহানার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেদিন থেকে রুমিন ফারহানারা ৩২ নম্বর ভাঙা নিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন, সেদিন থেকেই বুঝেছি বিএনপি আর চেতনার জায়গায় নেই। বরং চাঁদাবাজিতে আচ্ছন্ন হয়েছে।”
হাসনাত আরও বলেন, “একজন নেতা বলেছেন— ১০ মিনিটেই সরকার পতন করবেন যদি নির্দেশ আসে। প্রশ্ন হলো— এই ১৭ বছর আপনি কোথায় ছিলেন? খালেদা জিয়ার বাসার সামনে যে ট্রাক ছিল, সেটাও তো সরাতে আসেননি।”
জনগণের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, “এই বাস্তবতা আপনি জনগণের সামনে তুলে ধরুন। মোড়ে মোড়ে ভিডিও দেখান, মানুষকে জিজ্ঞেস করুন তারা কি এই চাঁদাবাজদের হাতে দেশ তুলে দিতে চায়? তারা হুমকি দেয়, বলছে— যতদিন নির্বাচন না হয়, ততদিন এই ধ্বংসযজ্ঞ চলবে। এটা তো এমন— আমি চুরি করেই যাব, না হয় চাবিটা হাতে দাও!”
তিনি বিএনপিকে একহাত নেন আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে: “আজ যারা বলছেন তারা মাসুম বাচ্চা ছিলেন, তারাই আজ মুজিববাদের ঠিকাদার! বিএনপির কর্মীরা একসময় ধানক্ষেতে ঘুমাতো, ঢাকায় এসে রিকশা চালাতো। অথচ তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু সুবিধাভোগী প্রতারক। এই প্রতারকরা অতীতে আওয়ামী লীগের পতাকাবাহী ছিল, আজ বিএনপির ছায়ায় মন্ত্রীসুলভ সুবিধা ভোগ করছে।”
“আমি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি— আপনারা চাইলে ফেইস-টু-ফেইস বিতর্কে আসুন। সত্যটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
আবারো তীব্র কণ্ঠে তিনি বলেন, “আপনাদের ভয়-ভীতি আমাদের উপর চলে না। আমরা যে জীবন যাপন করি, সেটাই আমাদের বোনাস। কাকে ভয় দেখাবেন আপনি?”
হাসনাত অভিযোগ করেন, “এই ১৭ বছরে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ। বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক— সবকিছু। আর সেই কর্মীরা মামলা খেয়েছে, মার খেয়েছে, সন্তানদের মুখ দেখতে পারেনি। এই প্রতারণার রাজনীতি চলতে পারে না। সিদ্ধান্ত আপনাদের— কার হাতে দেশ তুলে দেবেন?”
শেষে তিনি তরুণ প্রজন্মের ভাষা বোঝার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা বিএনপিকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু দয়া করে তরুণ প্রজন্মকে বুঝুন। আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে গেছে কারণ তারা বুঝতে পারেনি। এখন আপনারাও যদি না বোঝেন, তাহলে আপনাদেরও একই পরিণতি হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।