সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের গোবর খাইয়ে পবিত্র করে দেশে আনা হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার কাকড়াবুনিয়া ও মজিদ বাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির যৌথ আয়োজনে স্থানীয় গাবুয়া জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কড়া ভাষায় মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মঙ্গল ধ্বংস করতে এবং অমঙ্গলে পরিণত করতে একটি গ্রুপ কাজ করছে। এরা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পথভ্রষ্ট কিছু লোক। তারা সুযোগ বুঝে এখন আমাদের দলে ঢোকার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ আবার ডাবল বিএনপি সেজে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইছে। যারা দিল্লি গিয়েছেন, তাদেরকেও বলছি— আপনাদের গোবর খাইয়ে পবিত্র করে তারপর দেশে নেওয়া হবে।”
আলতাফ হোসেন চৌধুরীর এ মন্তব্য মুহূর্তেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় তোলে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের অভ্যন্তরে বিএনপির ভেতরেও এমন কিছু লোক আছে যারা প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এই সব লোকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের বিদেশে অবস্থান সত্ত্বেও বিএনপি শক্তিশালীভাবে দাঁড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এটি আল্লাহর রহমতের ফল। ম্যাডাম খালেদা জিয়া আবারও মাঠে নামবেন, তারেক রহমানও দেশে ফিরবেন। আমি গত ৩০ বছরে বিএনপিকে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হতে দেখিনি। এবারও ইনশাআল্লাহ ভুল হবে না।”
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আগামী নির্বাচনে টাকা দিয়ে ভোট কেনা যাবে না। আমরা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেব, টাকা নিয়ে ভোট দেওয়া হবে না। অযোগ্য কেউ নমিনেশন পাবে না।”
তিনি আরও দাবি করেন, বিএনপি এখন এতটাই শক্তিশালী যে ৩০০ আসনে প্রায় ১৮০০ যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি যেখানে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেখানে এখন প্রশিক্ষিত নেতাদের একটি বিশাল বাহিনী দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, “এই প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক চেতনা দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তারা দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন।"
এই পথসভায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও বক্তব্য দেন। তারা আওয়ামী লীগের শাসনামলে গণতন্ত্রের অবস্থা, মানুষের দুর্ভোগ এবং ভোটাধিকার হরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, জনগণ আর বর্তমান শাসনের অধীনে থাকতে চাইছে না, পরিবর্তনের জোয়ার তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর এ বক্তব্য আগামী দিনে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও বাড়িয়ে তুলবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে নিয়ে “গোবর খাইয়ে পবিত্র করার” মতো উসকানিমূলক মন্তব্য নিঃসন্দেহে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করবে। তবে বিএনপির ভেতরের কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার জন্যই এ ধরনের বক্তব্য ব্যবহার করেছেন বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো দাবি করছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা এই বক্তব্যকে নোংরা রাজনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, জাতির ইতিহাস ও মানুষের প্রতি অসম্মান দেখিয়েই বিএনপি টিকে থাকার চেষ্টা করছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এমন বক্তব্য তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বর্তমানে এক অস্থির সময় পার করছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এর মাঝে এ ধরনের মন্তব্য জনমনে আরও বিভক্তি সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।