বগুড়ার শেরপুরে জোড়গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ ও নানা অনিয়মের অভিযোগে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার জোড়গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, তিনি শুধু শিক্ষার মান ক্ষুণ্নই করেননি, বরং ক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেজাউল করিম একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি দ্রুত স্থানীয় নেতাদের আস্থা অর্জন করেন। রাজনৈতিক দলে এই অদলবদলের পর থেকেই তিনি ‘ক্ষমতার জাদুর ছোঁয়া’ পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠ হয়ে তিনি জোড়গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কোনো অভিযোগেরই বিচার হয়নি, বরং তিনি অব্যাহতভাবে তার পদে বহাল থাকেন।
রেজাউল করিমের গ্রামীণ এলাকা এখন আর আগের মতো নেই। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তিনি অবৈধ আয়ের মাধ্যমে এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি ও জমিজমা। আরও জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবারও বিএনপির নেতাদের সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা শুরু করেন। বিভিন্ন সময় উপজেলা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে তিনি যেন ইঙ্গিত দিচ্ছেন—তিনি আবার আগের দলে ফিরতে চান।
স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন তৃণমূল নেতা অভিযোগ করেন, রেজাউল করিম বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চালিয়েছিলেন। এখন পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় তিনি অর্থের দাপটে আবারও বিএনপিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন, যাতে তার অতীতের সব অনিয়ম ঢাকা পড়ে যায়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি পরিপত্র উপেক্ষা করে রেজাউল করিম বাজার থেকে প্রশ্নপত্র কিনে বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেন। পরীক্ষার প্রবেশপত্র বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গড়ে ১,৮০০ টাকা করে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়, যা নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় বোঝা।
শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে নির্মিত সাতটি দোকানঘর ভাড়া দেওয়ার সময় মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জামানত নেয়া হয়েছিল, যা পরে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ স্থানীয়রা তুলে ধরেছেন। এসব ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে এলাকায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, “সব অভিযোগই মিথ্যা। আমি ইতোমধ্যেই এর জবাব দিয়েছি।” তবে তার এই বক্তব্যে স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা অ্যাকাডেমিক অফিসার জাকির হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ শুধু বিদ্যালয়ের সুনামকেই ক্ষুণ্ন করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও ভবিষ্যতের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের দাবি, এই তদন্ত যেন প্রভাবমুক্তভাবে হয় এবং দোষী প্রমাণিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ও সততা ফিরে আসে।