বদরগঞ্জে এক সুধী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের হাতে দেশ তুলে দিয়েছিল। তিনি বলেন, নতুন স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা জরুরি।
বদরগঞ্জে এক সুধী সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং রংপুর-২ বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এটিএম আজহারুল ইসলাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় বদরগঞ্জ পৌরশহরের হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে সমর্পণ করেছিল। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ যে দেশ থেকে জন্ম নিয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেই দেশকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করেছে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনৈতিক শক্তিগুলো সব সময় আওয়ামী লীগের ভারত-নির্ভর নীতি ও অবস্থানের বিরোধিতা করে এসেছে। এই কারণে আওয়ামী লীগ ও ভারত কখনো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির কিংবা অন্যান্য ইসলামপন্থি দলকে পছন্দ করেনি এবং তাদের দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে তারা দেশ থেকে ইসলাম মুছে ফেলার সব রকম ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য ছিল দেশের ভেতরে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষা করা এবং ইসলামী শক্তিকে দুর্বল করা। তবে জনগণের আত্মত্যাগ ও ত্যাগী নেতৃত্বের কারণে সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এটিএম আজহারুল ইসলাম বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, ৩৬ জুলাই আবু সাঈদ মুগ্ধরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা নতুনভাবে রক্ষা করেছেন। তিনি দাবি করেন, এই নতুন স্বাধীনতার পথকে অনুসরণ করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করা জরুরি। তাঁর মতে, সেই আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে ভোটাররা নিশ্চিন্তে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। তিনি সতর্ক করেন, ইতিমধ্যেই কিছু মহল নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে এবং জনগণের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং জনগণের কাছে আস্থা তৈরি করতে হবে।
ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে এবং জনগণের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। তাই সাধারণ ভোটারদের কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তিনি আহ্বান জানান, ভোটাররা যেন নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। কেউ যদি ভোটকেন্দ্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে বা ভোটারদের ভয় দেখায়, তবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করবে এবং ভোটারদের নিরাপদে ভোট দিতে সহায়তা করবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বদরগঞ্জ উপজেলা আমির কামারুজ্জামান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামের সাবেক নায়েবে আমির শাহ রুস্তম আলী, উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মিনহাজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকসহ ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য নেতারা।
এটিএম আজহারুল ইসলাম সমাবেশ শেষে বদরগঞ্জ পৌরশহরের আম্বিয়ার মোড় জামে মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি বলেন, “যদি দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তবে ইসলামী দলগুলোকে ক্ষমতায় আনতেই হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, সমাজে সৎ মানুষ ছাড়া ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কোরআন ও হাদিসের আলোকে দেশ পরিচালনার জন্য অবশ্যই ইসলামপন্থি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি দোয়া কামনা করেন, যাতে জীবনের বাকি সময় তিনি জনগণের সেবা করতে পারেন এবং দেশের জন্য কাজ করতে পারেন।