গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএনপি অফিসে আওয়ামীপন্থিদের প্রবেশের প্রতিবাদে এক মণ দুধ ঢেলে পরিষ্কার করল ছাত্রদল। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম বিতর্ক ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে সম্প্রতি ঘটেছে এক অনন্য রাজনৈতিক প্রতিবাদ—এক মণ দুধ ঢেলে পরিষ্কার করা হয়েছে দলীয় অফিস। এ ঘটনাটি ঘটেছে ৬ আগস্ট, বুধবার রাতে, এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম তুহিন।
ছাত্রদলের দাবি, বিএনপির ভেতরে একটি অংশ সরকারি দল আওয়ামী লীগের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে, যা তাদের মতে ‘দলীয় আদর্শ ও আত্মমর্যাদার পরিপন্থী’। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, এই কাজের মাধ্যমে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং ৫ আগস্ট পালিত ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’কে অসম্মান করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ৫ আগস্ট উপলক্ষে আয়োজিত একটি বিজয় মিছিলকে কেন্দ্র করে। ছাত্রদল ও যুবদলের অভিযোগ, বিএনপির একটি অংশ—বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রপ্রার্থী ও আলোচিত নেতা ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা—‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এমনকি তাদের ভাষ্যমতে, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পরিচিত মুখও ওই রাতে অফিসে প্রবেশ করেছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন, বিএনপির ঐতিহ্য রক্ষায় এবং কলঙ্ক ঘোচাতে দলীয় অফিসকে প্রতীকীভাবে ‘পবিত্র’ করতে হবে। তাই এক মণ (প্রায় ৩৭ কেজি) তরল দুধ সংগ্রহ করে তা দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় পুরো অফিস চত্বর। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন নেতাকর্মী হাতে বালতি-বালতি দুধ নিয়ে অফিসের ভেতর ও বাইরের অংশ পরিষ্কার করছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা প্রতিবাদসূচক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং ‘দলীয় গৌরব রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’ বলেও জানাচ্ছেন।
তৌহিদুল ইসলাম তুহিন বলেন, “৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কিন্তু আমাদের দলের ভেতরেরই কিছু লোক ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েছে। এটা শুধু আমাদের নয়, সমগ্র দলের জন্যই অপমানজনক। তাই আমরা প্রতীকীভাবে অফিস ধুয়ে কলঙ্কমুক্ত করার কর্মসূচি পালন করেছি।”
স্থানীয়ভাবে এ ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। অনেকে একে প্রতিবাদের ‘নতুন ধারা’ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ একে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভক্তির চরম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। বিশেষ করে এমন সময় যখন দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা ও উত্তেজনা চরমে, তখন এমন ঘটনা আরও আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই ঘটনা শুধু একটি দলের অভ্যন্তরীণ সংকটের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি জাতীয় রাজনীতির অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, দলের অভ্যন্তরে এমন অনুপ্রবেশ কীভাবে সম্ভব হলো? এর পেছনে কি বড় কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে?
অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। কিছু মানুষ এটিকে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিলেও, অনেকেই বলছেন, রাজনীতিতে এমন প্রতীকী কর্মকাণ্ড একধরনের কৌশল—যা আবার দলের ভেতরের বিভক্তি ও অনাস্থারও প্রমাণ।
এমন ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে প্রতিবাদ, অন্যদিকে প্রতিক্রিয়া—উভয়েই দেখাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক পরিসরে উত্তেজনা কতটা গভীর।