close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আন্দোলনে না গিয়েও জুলাই যোদ্ধা, তালিকায় আছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরাও..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Many listed as July Fighters were never part of the movement. Some used fake hospital records, others were long-time patients or even deceased. Genuine victims are outraged as frauds take benefits.

আন্দোলনে অংশ না নিয়েও অনেকে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কেউ বন্ধ হাসপাতালের চিকিৎসা দেখিয়েছেন, কেউ মানসিক রোগী হয়েও পেয়েছেন সরকারি সহায়তা। প্রকৃত আহতদের বাদ দিয়ে ভুয়া নাম ওঠায় ক্ষোভ বাড়ছে।

আন্দোলনের ইতিহাসে জুলাই মাস চিহ্নিত হয়েছিল বড় ধরনের অস্থিরতা ও উত্তেজনার সময় হিসেবে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত গেজেট ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনে না গিয়েও অনেকে নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করেছেন। এমনকি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মীরাও। এতে প্রকৃত আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।

সিলেট সদর উপজেলার বাসিন্দা কামরুল হাসান রাব্বি এর অন্যতম উদাহরণ। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এই কর্মী গত জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় জড়িত থাকার পর পালিয়ে যান শাহরাস্তিতে। সেখানেই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পরদিন স্থানীয় পৌর মেয়রের বাসায় হামলা ও লুটপাটে গিয়ে আহত হন তিনি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেই আঘাতের সূত্র ধরে সরকারি গেজেটে তাকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

একইভাবে মো. রায়হান নামে আরেকজন দাবি করেন, তিনি ৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন এবং পরদিন চিকিৎসা নিয়েছিলেন শাহরাস্তির চিতোষী আইডিয়াল হাসপাতালে। অথচ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই হাসপাতালটি সরকার পতনের দুই বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বন্ধ হাসপাতাল থেকে তিনি কীভাবে চিকিৎসা নিলেন? তবুও তিনিও গেজেটে জায়গা পেয়েছেন।

শাহরাস্তির প্রকৃত আন্দোলনকারীরা বলছেন, আন্দোলনের সময় এ এলাকায় বড় কোনো সহিংসতা হয়নি। অথচ সরকারি গেজেটে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২৮ জনের নাম। তাদের মধ্যে অনেকে ভুয়া তথ্য দিয়ে তালিকায় ঢুকেছেন। কেউ পুরোনো মানসিক সমস্যাকে আন্দোলনের আঘাত হিসেবে দেখিয়েছেন, কেউ আবার নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মী হয়েও সরকারি সহায়তা নিয়েছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে এমন আরও উদাহরণ পাওয়া গেছে। মো. ইউছুব আলী দাবি করেছেন, তিনি কালিয়াপাড়ায় বাঁশের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন এবং সেই আঘাতের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে এক লাখ টাকার চেকও পেয়েছেন। অথচ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওইদিন কালিয়াপাড়ায় কোনো সংঘর্ষই হয়নি। অন্যদিকে গেজেটভুক্ত নাহিদুল ইসলাম রাতুল নিজের মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তার প্রতিবেশীরা জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই মানসিক রোগী। তারপরও তাকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এমনকি মৃত ব্যক্তির নামও যুক্ত হয়েছে তালিকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নাজমুল হাসান নামের এক যুবককে ‘জুলাই আন্দোলনে নিহত’ দেখিয়ে তার পরিবারকে দুই লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। অথচ নাজমুল আসলে গত বছরের আগস্টে নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান। তার লাশও উদ্ধার সম্ভব হয়নি। তবুও তাকে আন্দোলনে নিহত দাবি করে সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

এসব অনিয়মে এনজিও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)-এর নামও উঠে এসেছে। শাহরাস্তি এলাকায় এই সংস্থার সদস্যরাই নানাভাবে সুবিধাভোগী হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, যাদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে তাদের প্রায় সবাই ওই এনজিওর সদস্য। অথচ প্রকৃত আহতরা সহায়তা থেকে বঞ্চিত।

আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুল কাইয়ুম মাহিন এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আন্দোলনের সময় রাস্তায় ছিলাম। অথচ যাদের নাম গেজেটে এসেছে তাদের অনেককেই আমরা চিনি না। ভুয়া নাম যুক্ত করে সরকারি অর্থ লুট করা হচ্ছে।” আরেক নেতা আক্তার হোসেন শিহাব বলেন, “আমি আহত হয়েছি, কিন্তু তালিকায় আমার নাম নেই। অথচ ভুয়া তথ্য দিয়ে অনেকে জায়গা করে নিয়েছে।”

এ বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিয়া হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে পাঁচজনের নাম গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এখন প্রশ্ন উঠছে—যেখানে প্রকৃত আন্দোলনকারীরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত, সেখানে কীভাবে ভুয়া নাম যুক্ত হয়ে যাচ্ছে? প্রশাসনের কাছে দাবি উঠেছে, অবিলম্বে তালিকা পুনর্বিবেচনা করে ভুয়া নামগুলো বাদ দেওয়া হোক এবং প্রকৃত আহতদের ন্যায্য স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

No comments found