প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি নিজের ইচ্ছা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেন না, বরং সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জনগণের ইচ্ছাই সর্বশক্তি। তিনি নিজের কোনো মত বা স্বার্থ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেন না, বরং তাদের সিদ্ধান্তকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা বার্নামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। শনিবার (১৬ আগস্ট) বার্তাসংস্থাটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ প্রকাশ করে।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, “আমি নয়, পরিবর্তন চান সাধারণ মানুষ। আমি কেবল সেই পরিবর্তনকে সম্ভব করার পথে সহযোগিতা করছি। আমি কখনো নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেই না। জনগণ কী চায়, সেটি দেখি এবং তাদের ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের পথ সহজ করি।”
তিনি নিজেকে কোনো রাজনৈতিক নেতা মনে করেন না, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার একজন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দেখেন। তবে এই প্রক্রিয়া সহজ নয় বলে স্বীকার করেন তিনি। তার ভাষায়, “অনেক বাধা রয়েছে। কেউ কেউ এ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ থেকে যে রাজনৈতিক উপাদানগুলো অপসারিত হয়েছে, তারা আবারও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ সময় ধরে প্রকৃত ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। বিগত ১০ থেকে ১৫ বছর অনেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি, কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। অথচ ভোটাধিকার একটি মৌলিক অধিকার, যা ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ড. ইউনূস বলেন, “কল্পনা করুন, একজন তরুণ ১৮ বছর বয়সে ভোট দেওয়ার জন্য উদ্দীপ্ত। কিন্তু তার জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগই আসেনি, কারণ দেশে প্রকৃত নির্বাচন হয়নি। এবার সেই তরুণসহ লাখো মানুষ তাদের জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যেখানে মানুষ তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে স্বাধীনভাবে, কোনো ভীতি বা চাপ ছাড়াই। তার মতে, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো পরিবর্তন টেকসই হতে পারে না।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তিনি বারবারই জোর দিয়ে বলেছেন, জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক এবং তাদের ইচ্ছাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আর তিনি কেবল সেই ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একজন সহযোগী।