প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি কোনো নেতা নন; বরং জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়নের তত্ত্বাবধায়ক। স্বৈরাচার ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তিনি নিজেকে কখনো নেতা হিসেবে দেখেন না। বরং তিনি মনে করেন, তিনি একজন তত্ত্বাবধায়ক, যার একমাত্র দায়িত্ব হলো সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বার্নামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের চলমান পরিবর্তন, সংস্কার কার্যক্রম ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথচলা নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমি নই, মূল চালিকাশক্তি হলো সাধারণ মানুষ। তাদের ইচ্ছা ও দাবি অনুযায়ী পরিবর্তন আসবে। আমি শুধু তাদের পথকে সহজ করতে সাহায্য করছি। কখনো নিজের মতামত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করিনি, বরং আমি সব সময় তাদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, দেশের দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, স্বৈরাচারী শাসন এবং ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিশেষ করে গত ১০ থেকে ১৫ বছরে বিপুলসংখ্যক নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। অথচ ভোটাধিকারই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
তার মতে, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এবার নতুন এক সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে ১৮ বছর বয়সে পৌঁছানো লাখ লাখ তরুণ-তরুণী প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের তরুণরা উচ্ছ্বসিত, তারা ভোট দিতে চায়, কিন্তু এতদিন সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। এবার তারা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে।”
তবে এ প্রক্রিয়ার পথ মোটেও সহজ নয় বলে সতর্ক করেন তিনি। ড. ইউনূস স্পষ্ট করে জানান, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এই সংস্কার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হওয়া কিছু রাজনৈতিক শক্তি আবারও অস্থিতিশীলতা তৈরি করে প্রক্রিয়াটিকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, “চেষ্টা চলছে গণতন্ত্রকে পথচ্যুত করার, কিন্তু আমরা জনগণের ইচ্ছাশক্তিকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।”
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সফল হতে পারে না। এ কারণেই তার প্রশাসনের লক্ষ্য হলো সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, যাতে প্রতিটি ভোটার—বিশেষ করে প্রথমবার ভোট দিতে আসা তরুণরা—আস্থা নিয়ে ব্যালট বাক্সে ভোট দিতে পারেন।
ড. ইউনূসের মতে, বাংলাদেশ এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে নেওয়া সঠিক পদক্ষেপগুলোই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং তাদের মত প্রকাশে স্বাধীন থাকে, তবে গণতন্ত্রের নতুন ভোর দেখা দেবে।
তিনি আবারও মনে করিয়ে দেন, তার অবস্থান নেতৃত্বের নয় বরং তত্ত্বাবধায়কের। জনগণের আকাঙ্ক্ষাই তার দিকনির্দেশনা। তিনি শুধু সঠিক পরিবেশ ও সহায়তা দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তব রূপ দিতে চান।